এক জোড়া নারী ইঁদুর থেকে বাচ্চা ইঁদুরের জন্ম দিলেন চীনের গবেষকেরা

সন্তান জন্ম দিতে বিপরীত লিঙ্গের প্রয়োজন হবে কি হবে না—এমন প্রশ্নের জবাব দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। বিবিসি, ইনডিপেনডেন্ট, স্কাই নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম জানাচ্ছে এমনই এক ভিন্ন সংবাদ।

চীনের একাডেমি অব সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে এক জোড়া নারী ইঁদুর থেকে একটি বাচ্চা ইঁদুরের জন্ম ঘটিয়েছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জন্ম নেওয়া ইঁদুরের বাচ্চাটি সুস্থ রয়েছে। এটিই ইঁদুরের সমলিঙ্গের মাধ্যমে জন্ম দেওয়া নতুন বাচ্চা নয়; এর আগে এক জোড়া পুরুষ ইঁদুর থেকে একটি বাচ্চার জন্ম দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মূলত একটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। আর তা হলো প্রজননের জন্য দুটি বিপরীত লিঙ্গ কতটা পরিহার্য। কারণ, প্রাকৃতিকভাবেই বিশ্বে এমন কিছু প্রাণি আছে, যেগুলোর বংশ বিস্তারের বিপরীত লিঙ্গের প্রয়োজন হয় না। যেমন: কিছু মাছ, সরীসৃপ, পাখি ও উভচর প্রাণী এ কাতারে রয়েছে।

প্রাণীর বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া, তার কোনটির পরিবর্তন ঘটালে একই লিঙ্গের দুজনকে ব্যবহার করে নতুন প্রাণীর জন্ম দেওয়া সম্ভব—চীনা গবেষকেরা সেটাই জানার চেষ্টা করছিলেন। গবেষণার অংশ হিসেবে তাঁরা একটি মা ইঁদুর থেকে একটি ডিম্বাণু নিয়েছেন। আর দ্বিতীয় মেয়ে ইঁদুর থেকে নিয়েছেন একধরনের কোষ। বিশেষ এই কোষকে বলা হয় ‘হ্যাপলয়েড অ্যামব্রোয়োনিক স্টেম সেল’।

নতুন প্রাণের জন্ম দেওয়ার জন্য যত জেনেটিক (জিনগত) কোড বা ডিএনএ দরকার, এই দুটিতে ছিল তার অর্ধেক অর্ধেক। কিন্তু দুটিকে মেলানোই যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা ‘জিন এডিটিং’–এর মাধ্যমে এই দুটি থেকে তিন জোড়া করে জেনেটিক কোড মুছে ফেলেছেন—যাতে করে তাদের মধ্যে মিলন সম্ভব হয়।

তবে এ সফলতার পরেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘প্রজননের ক্ষেত্রে দুই বিপরীত লিঙ্গের অপরিহার্যতা রয়েছে। কারণ আমাদের ডিএনএ বা জেনেটিক কোড বাবা নাকি মা, কার কাছ থেকে আসছে, তার ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে। জেনেটিক কোডের একটি যদি পুরুষ এবং একটি নারী থেকে না আসে, তাহলে আমাদের পুরো শারীরিক-মানসিক বিকাশ গোলমেলে হয়ে পড়ে। অর্থাৎ আমাদের যে ডিএনএ শুক্রাণু থেকে এবং যে ডিএনএ ডিম্বাণু থেকে আসে, তাতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের “ছাপ” থাকে। এটিকে বলে “জেনোমিক ইমপ্রিন্টিং”। সেটাই আসলে নির্ধারণ করে কীভাবে এই দুইয়ের সংযোগে নতুন কী তৈরি হবে।’

চীনা বিজ্ঞানীরা যখন একই লিঙ্গের ইঁদুর ব্যবহার করে নতুন বাচ্চা ইঁদুরের জন্ম দিয়েছেন, তখন তাদের জেনেটিক এডিটিং এর মাধ্যমে এই জেনোমিক ইমপ্রিন্টিং বা ছাপ সংশোধন করতে হয়েছে বা মুছে ফেলতে হয়েছে। যাতে করে নতুন ইঁদুর জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়, সেটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়।

এই পরীক্ষা যাঁরা চালিয়েছেন, তাঁদের একজন ড. ওয়েই লি। তিনি বলেন, ‘আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি কী করা সম্ভব। আমরা দেখেছি দুই মা থেকে যে বাচ্চা ইঁদুর হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে অনেক ত্রুটি সারিয়ে তোলা সম্ভব। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে দুই বিপরীত লিঙ্গের অপরিহার্যতাকে অতিক্রম করা সম্ভব।’

তাহলে সমলিঙ্গের মানুষ থেকে কি মানবশিশুর জন্ম সম্ভব—তার উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা? ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের টেরেসা হোম বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে এর সম্ভাবনা আছে। এই গবেষণার মাধ্যমে একই লিঙ্গের যুগলেরা নিজেরাই যেন স্বাস্থ্যবান শিশুর জন্ম দিতে পারেন, তার পথ খুলে যেতে পারে।’