খাসোগি 'হত্যা': সৌদি থেকে সরছে ভার্জিন-উবার

জামাল খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় ভার্জিন গ্রুপের প্রধান রিচার্ড ব্রানসন ও উবারের সিইও দারা খোসরোওশাহী সৌদি আরবের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফাইল ছবি
জামাল খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় ভার্জিন গ্রুপের প্রধান রিচার্ড ব্রানসন ও উবারের সিইও দারা খোসরোওশাহী সৌদি আরবের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফাইল ছবি

সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় ব্রিটিশ ধনকুবের ভার্জিন গ্রুপের প্রধান রিচার্ড ব্রানসন ও উবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দারা খোসরোওশাহী সৌদি আরবের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে প্রবেশের পর সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। এরপরই বিশ্বে অন্যতম বড় দুটি কোম্পানি থেকে এ ঘোষণা এল।

ব্লুমবার্গ ও সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, রিচার্ড ব্রানসন সৌদি আরবের সঙ্গে তার কোম্পানির হতে যাওয়া ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। আর সৌদি আরবে হতে যাওয়া একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণ বাতিল করে দিয়েছেন উবারের সিইও দারা খোসারোশাহী।

ভার্জিন গ্যালাটিক গ্রুপের ওয়েবসাইটে গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে রিচার্ড ব্রানসন বলেন, খাসোগির নিখোঁজের ঘটনা যদি সত্যিই প্রমাণিত হয় তাহলে সৌদি সরকারের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের মতো আমাদের কারোরই ব্যবসার সুযোগ আর থাকবে না। সৌদি আরবে তার দুটি বড় বিনিয়োগ প্রকল্প হাইপারলুপ ট্রেন ও স্পেস কোম্পানি ভার্জিন অরবিটের কার্যক্রম নিয়ে সব ধরনের আলোচনা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন।

উবারের সিইও দারা খোসরোওশাহী বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, খাসোগির ঘটনায় আমি খুবই সমস্যার মধ্য আছি। আমরা বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং এ সমস্যার একটা সুন্দর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সৌদি আরবে আর যাচ্ছি না। অক্টোবরে (২৩ ও ২৫ অক্টোবর) রিয়াদে বিনিয়োগ সম্মেলনেও যোগ দিচ্ছি না।’

২০১৬ সালের পর থেকে সৌদি আরবে উবার বড় বিনিয়োগ করে চলেছে। এর পরিমাণ বর্তমান বাজার মূল্য সাড়ে ৩ শ কোটি ডলার।

সৌদি আরবে অক্টোবরে হতে যাওয়া বিনিয়োগ সম্মেলনে জেপি মরগ্যানের সিইও জেমি ডিমন, ব্ল্যাক করের চেয়ারম্যান ল্যারি ফিঙ্কসহ বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনে মিডিয়া পার্টনার ফিনানসিয়াল টাইমস তাদের নাম আগেই প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

সৌদি যুবরাজের মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক সৌদি সাংবাদিক খাসোগি গ্রেপ্তার আতঙ্কে এক বছর আগে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। ব্যক্তিগত কাগজপত্রের প্রয়োজনে ২ অক্টোবর সৌদি কনস্যুলেট ভবনে তিনি প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। বলা হচ্ছে, সৌদি থেকে দুটি ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগি হত্যায় অংশ নেয়। হত্যার পর ওই স্কোয়াড দ্রুত তুরস্ক ত্যাগ করে। তুরস্কের স্থানীয় দৈনিকগুলোয় ওই ১৫ জনের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন ব্যক্তি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটের সদস্য। এদের একজন সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।

ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে সাংবাদিক জামাল খাসোগি ‘হত্যার’ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে তাদের কাছে অডিও-ভিডিও, সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকার কথা জানিয়েছে দেশটি। এদিকে খাসোগি নিখোঁজের ঘটনা তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে তদন্তে সৌদি প্রতিনিধিদল গতকাল শুক্রবার তুরস্কে পৌঁছেছে।
শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ঘটনাটি তদন্তে যুক্ত তুর্কি গোয়েন্দা বিভাগের একজন বিবিসিকে জানিয়েছেন, খাসোগিকে হত্যার ব্যাপারে ‘তথ্য প্রমাণ’ রয়েছে তাঁদের কাছে।

নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ফাইল ছবি
নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ফাইল ছবি

ওয়াশিংটন পোস্টকে একটি সূত্র জানিয়েছে, খাসোগিকে মারধরের শব্দ শোনা গেছে। রেকর্ডিং থেকে বোঝা গেছে, খাসোগিকে হত্যার পর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। আরেকটি সূত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছে, খাসোগি এবং আরবি ভাষায় কথা বলা বেশ কয়েকজন মানুষের আওয়াজ পাওয়া গেছে। খাসোগিকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে।

খাসোগি নিখোঁজ, কিন্তু তাঁর হত্যার ব্যাপারে নিশ্চিত তুরস্ক কর্তৃপক্ষ। এরপরও তুরস্ক সরকার সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘটনাটি যৌথভাবে তদন্ত করতে রাজি হয়েছে। সৌদির একটি প্রতিনিধিদল গতকাল তুরস্কে পৌঁছেছে। সপ্তাহজুড়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সাল তুরস্কে এসেছিলেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন। তাঁর সফরের সময় দুই দেশের যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, সৌদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ আবদুলাজিজ বিন সৌদ বিন নাইফ বিন আবদুলাজিজ আল সৌদ বলেছেন, ‘তাঁকে (খাসোগি) হত্যার নির্দেশ দেওয়ার তথ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ।’ তাঁর ভাষায়, সৌদি চায়, ঘটনার ‘পুরো সত্য’ বেরিয়ে আসুক।

যাঁর দিকে অভিযোগের তির, সেই ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরবের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। খাসোগি ওই দিন কনস্যুলেট ভবনে এসেছিলে স্বীকার করে তিনি বলেন, কাজ শেষে খাসোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বেরিয়েও গেছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, খাসোগি ‘বেরিয়ে গেছেন’ বলে দায় এড়াতে পারে না সৌদি আরব।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর জামাতা জারেদ কুশনারের সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্সের এখন সুসম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খুব একটি উচ্চাবাচ্য করতে না চাইলেও সিনেটের ক্রমাগত চাপের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। বুধবার বব কোর্কারের নেতৃত্বে মার্কিন সিনেটে দ্বিদলীয় ২২ জন সিনেটর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি চিঠি স্বাক্ষর করেছেন। খাসোগির বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তাঁর তদন্ত চেয়েছেন তাঁরা।