জেরুজালেমকে কেন স্বীকৃতি দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া?

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। ছবি: রয়টার্স
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। ছবি: রয়টার্স

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে গত সোমবার মত প্রকাশ করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তেল আবিবে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে আনার ব্যাপারেও কথা বলেন তিনি। মরিসনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ভোটের রাজনীতি।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো নির্বাচনী পরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন মরিসন। নির্বাচনী পরিস্থিতিতে সরকার ও রাজনৈতিক দলের একজন প্রধান হিসেবে মরিসন কেমন ভূমিকা রাখবেন, তার নজির মিলবে আগামী শনিবার।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ওয়েন্টওর্থ নির্বাচনী এলাকায় এদিন উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেখানে ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন করবেন ইসরায়েলে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত ডেভ শর্মা। আসনটি টার্নবুলের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হলেও তাঁর অবর্তমানে লিবারেল পার্টির জন্য সেটি এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লিবারেল পার্টির পক্ষ হয়ে এই আসনে ডেভ শর্মা যদি হেরে যান, তবে অস্ট্রেলিয়ার হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবেন মরিসন। এই শঙ্কা থেকেই মরিসন ইহুদি অধ্যুষিত এলাকাটিতে ভোট পেতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নাটক করছেন। তাই তাঁর সমালোচনায় সরব দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। সমালোচনা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও।

গত বছরের ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইতিমধ্যে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করেছেন। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প নিন্দিত হয়েছেন। এখন ট্রাম্পের পথই অনুসরণ করতে যাচ্ছেন মরিসন।

এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সংবাদপত্র সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক সম্পাদক পিটার হার্টচার এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, মাত্র কয়েকটা ভোটের জন্য জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা দায়িত্বহীনতার পরিচয়।’

পিটার বলেন, ‘ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে একমত পোষণ করে মরিসন যদি ওয়েন্টওর্থের ইহুদি বাসিন্দাদের ভোট পাওয়ার আশা করেন, তবে সেটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ ডেভ শর্মার সঙ্গে ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে। অধিকাংশ ইহুদিরা তাঁকে এমনিতেই ভোট দেবেন। মরিসনের এই সিদ্ধান্ত লিবারেল পার্টির জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ভোটারের জোগান দেবে না।’

ওয়েন্টওয়ার্থের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ ইহুদি। তাঁদের একটা বড় অংশ ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত। আর মরিসনের সিদ্ধান্ত ওয়েন্টওর্থের ইহুদি বাসিন্দাদের জন্য মোটেও সুখকর হবে না বলে মনে করছেন পিটার। তিনি বলেন, ‘তাঁদের মোটেও খুশি হওয়া উচিত না। বরং তাঁরা অপমানিতবোধ করবেন। কেন, না মরিসন তাঁদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছেন।’

মরিসনের জেরুজালেম সমর্থন ইস্যু নিয়ে নাখোশ অন্যান্য ধর্মীয় কমিউনিটির ব্যক্তিরা। তাঁদের অনেকে বলেছেন, আজ যিনি সংখ্যালঘু ভোটারের সমর্থনের জন্য একটি জাতিগত ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করছেন, কাল তিনি অন্য জনগোষ্ঠীর পেছনে যে লাগবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

মাত্র একটি আসনে নির্বাচনের জন্য যেখানে মরিসন জাতিগত ও ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করতে চাইছেন, সেখানে আগামী নির্বাচনে আধ ডজনের বেশি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ভোটারদের সমর্থন পেতে তিনি কী করবেন, তা নিয়ে শঙ্কিত সিডনির মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা।