যুবরাজ সালমানের অন্ধকার দিক

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ তাঁর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ২০১৫ সালে সিংহাসনের উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন। এরপর রক্ষণশীল দেশটিতে বিন সালমানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম কুড়ায়। এরই মধ্যে দেশটিতে নারীরা গাড়ি চালানোর এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্টেডিয়ামে গিয়ে ফুটবল খেলা দেখার অনুমতি পেয়েছেন। এ ছাড়া উড়োজাহাজের সহকারী পাইলট হওয়ার এবং ব্যাংকে কাজ করারও অনুমতি পেয়েছেন তাঁরা।

কিন্তু সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমে বিন সালমানের অন্ধকারময় দিকের ওপর আলোকপাত করা হচ্ছে।

ইয়েমেন যুদ্ধ
হুতি বিদ্রোহীদের দমনে ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে অভিযান পরিচালনা করছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। এরপর এ পর্যন্ত এই যুদ্ধে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ভিক্ষে প্রাণ গেছে আরও অনেক মানুষের। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো ইয়েমেনি। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সামরিক জোট নির্বিচারে বেসামরিক লোকজন এবং হাসপাতাল, বিদ্যালয় ও অন্য অবকাঠামোর ওপর বোমাবর্ষণ করছে। কিন্তু গত এপ্রিলে টাইম সাময়িকীকে বিন সালমান বলেন, সামরিক অভিযানে ভুল হতেই পারে।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
২০১৭ সালের নভেম্বরে সৌদি আরব সফরে যান লেবাননের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। কিন্তু রিয়াদে পৌঁছার এক দিন পর সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচারে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে পরে জানায়, সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ বিন সালমান জরুরি সাক্ষাতের কথা বলে হারিরিকে রিয়াদে ডেকে নিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

মানবাধিকারকর্মী গ্রেপ্তার
চলতি বছরের গোড়ার দিকে সৌদি আরব গাড়ি চালানো নারীদের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ মানবাধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নারী অধিকারকর্মীও রয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, বিন সালমান আসলে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতেই ওই মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার করিয়েছেন।

রিজ-কার্লটন ঘটনা
যুবরাজ মনোনীত হওয়ার পর বিন সালমান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপরও ধরপাকড় চালিয়েছেন। গত বছর সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির কয়েক ডজন ধনাঢ্য ব্যক্তিকে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করে, যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন সৌদি রাজপরিবারের সদস্য। তাঁদের রিয়াদে বিলাসবহুল হোটেল কার্ল-রিজটনে রাখা হয়।

উপসাগরীয় সংকট
২০১৭ সালের জুন মাসে সৌদি আরবসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং দেশটির ওপর কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ করে। এই পদক্ষেপের পেছনের ব্যক্তিটিও বিন সালমান বলে মনে করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডের হার বৃদ্ধি
মানবাধিকার সংগঠন রিপ্রিভ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের হার অনেকখানি বেড়ে গেছে। গত মার্চে রিপ্রিভ জানায়, বিন সালমান যুবরাজ হওয়ার পর আট মাসের মধ্যে ১৩৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব।