কলকাতার পূজামণ্ডপে এক টুকরো কার্জন হল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের আদলে এবার পূজামণ্ডপ তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির উত্তরপাড়ার ইয়ুথ কোর ক্লাব। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের আদলে এবার পূজামণ্ডপ তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির উত্তরপাড়ার ইয়ুথ কোর ক্লাব। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এবারের দুর্গাপূজায় মণ্ডপ ও প্রতিমা নির্মাণে বৈচিত্র্যের অভাব নেই। কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে এবার চলেছে এই মণ্ডপ আর প্রতিমা নির্মাণে আধুনিক ও সাবেকি পূজার লড়াই। তবে ভার ছিল বেশি আধুনিক থিমের। রাজ্যজুড়ে এবারও তৈরি হয়েছে নানা বৈচিত্র্যের পূজামণ্ডপ আর প্রতিমা। এই বৈচিত্র্যের মাঝেই উঠে এসেছে এক টুকরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের আদলে এবার পূজামণ্ডপ তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির উত্তরপাড়ার ইয়ুথ কোর ক্লাব।

আজ বৃহস্পতিবার দুর্গাপূজার মহানবমী। গতকাল ছিল মহাঅষ্টমী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নবমীর ভোরে মণ্ডপ আর প্রতিমা দেখার জন্য মানুষ ছুটেছে কলকাতাসহ গোটা রাজ্যের বিভিন্ন মণ্ডপে।

কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ আজও ভাসছে জনতার এই মহাপ্লাবনে। শারদীয় দুর্গাপূজার প্রধান দিন মহাঅষ্টমী। তাই গতকাল সকাল থেকে কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পূজামণ্ডপে ছড়িয়ে পড়েছিল জনতার মহাস্রোত। দেখা দিয়েছে, জনতার মহাপ্লাবন। বেলুরের রামকৃষ্ণ মঠ, পলাশীর দুর্গাপ্রসন্ন ব্রহ্মচারীর আশ্রমসহ রাজ্যের অনেক মন্দিরে চলেছে কুমারী পূজা।

এ কে ব্লকের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
এ কে ব্লকের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এবার এই কলকাতা মহানগরীতেই সর্বজনীন পূজা হয়েছে ২ হাজার ৫০৯টি। প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে আজ সকাল থেকে ভক্তদের ভিড় শুরু হয়েছে। গতকাল অষ্টমীর দিন সারা রাত ধরে কলকাতায় চলেছে পাতাল রেল, সাধারণ রেলসহ, বাস। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নেœপ্রতিমা দর্শন করতে পারে, এ জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা পুলিশসহ রাজ্যের পুলিশ। আর সব থেকে বেশি সতর্কতা জারি হয়েছে কলকাতার সব পূজামণ্ডপে। নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ৮ হাজার পুলিশ।

এবারের পূজায় কলকাতা মহানগরীতে বৈচিত্র্যের অভাব নেই। কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের দুর্গোৎসবে এবারের থিম করা হয়েছে ৪০ কোটির রুপার রথে মা দুর্গা আসছেন মর্ত্যে। ১৬০০ বর্গফুট ব্যাসার্ধের এই রথে রয়েছে চারটি তলা। ১০ টন রুপা দিয়ে তৈরি হয়েছে এই রথ। বাহুবলির পর এবার পদ্মাবতকে থিম করেছে উত্তর কলকাতার শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মোহাম্মদ আলী পার্কের এবারের পূজার থিমও পদ্মাবত। দক্ষিণ কলকাতা মুদিয়ালি ক্লাব থিম করেছে ৩৫ ফুট লম্বা আর ৩০ ফুট চওড়া এক জোড়া ডোকরা ঘোড়াকে। বেহালার নস্করপুর সর্বজনীন থিম করেছে বেনারসি হুঁকোর। ১ হাজার হাতের দুর্গা বানিয়েছে কামরাবাদ সুভাষপল্লি সর্বজনীন। সল্টলেকের এ কে ব্লকের পূজার থিম ৪০ ফুটের দশানন বা রাবণ। জুরাসিক পার্ক দেখা যাবে সল্টলেকের এফডি ব্লকে। রাখা হয়েছে বিভিন্ন যুগের ডাইনোসর। ৬ টন হলুদ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে সন্তোষপুর লেকপল্লি।

উল্টোডাঙ্গা জাগরণী সংঘের থিম হে মানব। কেষ্টপুর মাস্টারদা সূর্য সেন স্মৃতি সংঘের থিম, স্বপ্নের মায়াজাল। কেষ্টপুর প্রফুল্ল কানন বালকবৃন্দ সর্বজনীনের থিম বাঙাল–ঘটি বিতর্ক।

বেহালা সর্বজনীনের থিম জাতপাত নিয়ে হানাহানি বন্ধ হোক। মুদিয়ালি ক্লাবের থিম মায়ের আঁচল। বড়িশা ইয়ুথ ক্লাবের থিম রান্নাঘরের হাতা-খুন্তি-বঁটি। বেহালার দেবদারু ফটকের থিম খাদ্য–সংকট। নির্ভীক সাংবাদিকতাকে থিম করেছে সিঁথির দুর্গোৎসব কমিটি। সেলিমপুরের ঐকতানের থিম বাজছে ঢাক, বাজছে কাঁসর। আলিপুর সর্বজনীনের থিম রূপকথা নয়, জীবনের ইতিকথা।

বাদামতলা আষাঢ় সংঘ থিম করেছে সব চরিত্র কাল্পনিক। আহিরীটোলা যুবকবৃন্দের থিম যৌন কর্মীদের বঞ্চনা। পাইকপাড়া পল্লিবাসীদের থিম রিকশা। শোভাবাজার সর্বজনীনের থিম অতিরিক্ত খাবার ফেলবেন না, দান করুন। দমদম পার্ক সর্বজনীনের থিম পরিবেশ বাঁচান। লেকটাউন নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের থিম বাংলার নাটককথা। উত্তর কলকাতার চালতাবাগান সর্বজনীন থিম কবিগুরুর শান্তি নীড়।

বি জে ব্লকের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বি জে ব্লকের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

হুগলির উত্তরপাড়ার ইয়ুথ কোর ক্লাব এবার থিম করেছে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। কার্জন হলের আদলে তৈরি হয়েছে এখানের পূজামণ্ডপ। এখানেই রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব থেকে বিভিন্ন মনীষীর প্রতিকৃতি। আছে বেগম রোকেয়া, সুরসম্রাট আব্বাসউদ্দিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্‌দীন, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুসহ আরও কয়েকজন মনীষীর ছবি।

নিরাপত্তার স্বার্থে কলকাতা মহানগরীতে এবার ৪০০টি পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। রাস্তায় টহল দিচ্ছে ২৪টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের গাড়ি। বড় বড় পূজামণ্ডপে বসানো হয়েছে ৪৬টি ওয়াচ টাওয়ার। লাগানো হয়েছে ৭৪টি সিসি ক্যামেরা। পূজা প্যান্ডেলে বা রাস্তায় নারীদের ওপর ইভ টিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের সাহায্যের জন্য রাখা হয়েছে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্স বুথ। এ ছাড়া কলকাতাজুড়ে চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে ২৭টি অ্যাম্বুলেন্স। এতে করে পূজা দেখতে আসা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া কলকাতায় প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ২৪টি ঘাটকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এসব ঘাটে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের সদস্যদের রাখা হয়েছে।