ভারতে # মি টুর প্রথম বলি এম জে আকবর

>
  • নারী নির্যাতনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেন ৬৭ বছরের এই সাবেক সাংবাদিক-সম্পাদক
  • ১০-১২ জন নারী সাংবাদিক একই ধরনের অভিযোগ আনেন
  • সব অভিযোগ শুধু অস্বীকারই করেননি, আইনি পদক্ষেপের কথাও জানান
এম জে আকবর
এম জে আকবর

ভারতে ‘# মি টু’ আন্দোলনের প্রথম বলি হলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোবাশার জাবেদ আকবর। নারী নির্যাতনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেন ৬৭ বছরের এই সাবেক সাংবাদিক-সম্পাদক।

গতকাল বুধবার বিকেলে আকবর ইস্তফাপত্র জমা দেন। পদত্যাগের পর এক বিবৃতিতে এম জে আকবর বলেন, ‘ব্যক্তিগত স্তরে আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা অভিযোগ এসেছে, আইনের সাহায্য নিয়ে ব্যক্তিগতভাবেই আমি তার মোকাবিলা করব। তাই মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ প্রথম প্রকাশ্যে আনেন একদা তাঁরই সহকর্মী সাংবাদিক প্রিয়া রামানি। তাঁর মুখ খোলার পর একে একে অন্তত আরও ১০-১২ জন নারী সাংবাদিক একই ধরনের অভিযোগ আনেন। বিদেশ সফর সেরে দেশে ফিরে গত রোববার এক বিবৃতিতে আকবর সব অভিযোগ শুধু অস্বীকারই করেননি, আইনি পদক্ষেপের কথাও জানান।

গত সোমবার দিল্লির পাতিয়ালা হাউস নিম্ন আদালতে প্রিয়ার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানি মামলা দায়েরও করেন তিনি। কিন্তু দুদিন কাটতে না কাটতেই তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিতে হলো। প্রবল জনমতই এর কারণ।

ইস্তফা না দিয়ে আকবর মন্ত্রিত্ব চালিয়ে যাওয়ায় এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে ওঠে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর পক্ষে রয়েছেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী চাইলে ইস্তফা না দিয়ে আকবরের অন্য কোনো উপায় থাকত না। বিরোধীদের চাপের মুখে এই দাবি মানতে মোদি রাজি ছিলেন না। আইনের চোখে দোষী প্রতিপন্ন না হওয়া পর্যন্ত আকবরকে মন্ত্রী পদে রেখে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু এই মনোভাব দল ও সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, প্রবল জনমত তৈরি হচ্ছে, এই ধারণা দৃঢ় হওয়ার পর আকবরকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। স্পষ্টতই দল ও সংঘ পরিবারের চাপের মুখে ভোটের আগে সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি।

সরকার ও শাসক দল হিসেবে বিজেপি এ ক্ষেত্রে ক্রমে কোণঠাসা হচ্ছিল। বিশেষ করে একের পর এক নারী সাংবাদিক একই ধরনের অভিযোগে সরব হওয়ায়। একদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধী কংগ্রেসের তীব্র আক্রমণ, নরেন্দ্র মোদির ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে রাজনৈতিক ভাষণ, অন্যদিকে আকবরের বিরুদ্ধে ও প্রিয়া রামানির পক্ষে দেশের মহিলা সাংবাদিকদের একজোট হওয়ার মোকাবিলা করা সরকার ও দলের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। বুধবার প্রিয়া রামানির পাশে এসে দাঁড়ান আরও ২০ জন মহিলা সাংবাদিক। তাঁরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময়ে আকবর প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত খবরের কাগজ দ্য এশিয়ান এজ-এ সাংবাদিকতা করেছেন। আকবরের বিরুদ্ধে তাঁরা এক যৌথ বিবৃতি দেন। তাতে বিচারককে অনুরোধ করেন, মামলার শুনানি শুরু হলে তাঁদের কথাও যেন শোনা হয়। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, শুধু প্রিয়াই নন, তাঁদের অনেকেও আকবরের যৌন নির্যাতনের শিকার। বাকিরা তার সাক্ষী।

আকবরের পদত্যাগ দাবি করে বুধবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও লেখে ফাউন্ডেশন অব মিডিয়া অ্যান্ড বৃহন্মুম্বাই ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট নামে এক সংগঠন। প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে আকবর যে মামলা দায়ের করেছেন, তা প্রত্যাহারের দাবিও জানায় মহিলা সাংবাদিকদের ওই সংগঠন। চিঠিতে তাঁরা লেখেন, ‘মানহানির মামলার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনেরা সব সময় কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেন। মহিলাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া এই প্রয়াস আর কিছু নয়।’

আকবরের ইস্তফার খবর শোনার পর প্রিয়া রামানি টুইট মারফত তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। বলেন, ‘এখন আদালতের সুবিচার পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।’ দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল টুইট করে বলেন, ‘এত দেরি করার জন্য আকবরের লজ্জিত হওয়া উচিত। কৃতিত্বটা সরকার বা আকবরের নয়। কৃতিত্ব সম্পূর্ণভাবেই #মি টু আন্দোলনের এবং সেই সব নারীর যাঁরা অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।’ আকবরের বিরুদ্ধে আরও এক অভিযোগকারী সাংবাদিক সুতপা পাল সবাইকে শুভ অষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘সুবিচারের পথে এটা প্রথম পদক্ষেপ।’