১২ বছরে একবার ভালোবাসার নীল ফুল

ফুটন্ত দুর্লভ ফুল নীলাকুরিঞ্জি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ফুটন্ত দুর্লভ ফুল নীলাকুরিঞ্জি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বিশ্বে বিরলতম একটি ফুলের নাম নীলাকুরিঞ্জি। দুর্লভ এই ফুল প্রতি ১২ বছরে একবার ফোটে। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যের মুন্নার শহর থেকে দূরে নির্জন পাহাড়ি এলাকায় এই ফুল পাওয়া যায়। যখন নীলাকুরিঞ্জি ফোটে, তখন ওই পাহাড়ি এলাকা বেগুনি রঙে ছেয়ে যায়।

দ্য হিন্দু পত্রিকার সাবেক সম্পাদক রায় ম্যাথিউ রচিত ‘কুরিঞ্জি: দ্য ফ্লোয়ার অব দ্য ব্লু মাউনটেনস’ বইয়ে তিনি লেখেন, বিশ্বে আর কোথাও এই বিরল ফুল জন্মে না। কেরেলার বনে বসবাসকারী মুথুভান নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লোকজন বিশ্বাস করে, কুরিঞ্জি হচ্ছে ভালোবাসা ও রোমান্সের প্রতীক।

বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকাজুড়ে ফোটে আছে নীলাকুরিঞ্জি ফুল। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকাজুড়ে ফোটে আছে নীলাকুরিঞ্জি ফুল। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৬০০ মিটার উঁচুতে মুনার এলাকার অবস্থান। চা, কফি ও মসলার চাষাবাদে এই এলাকা পরিচিত। পর্যটকদের কাছে এলাকাটি ব্যাপক আকর্ষণীয়।

নীলাকুরিঞ্জি, সংক্ষেপে কুরিঞ্জি হিসেবে পরিচিত। এটি স্ট্রবিল্যান্থেস প্রজাতির একটি উদ্ভিদ; যা প্রায় ৩৫০ প্রজাতির ফুলগাছের একটি জাত। যার মধ্যে ৫৯ প্রজাতি ভারতের উপদ্বীপ এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

স্ট্রবিল্যান্থেসের বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন সময়ে ফোটে। কিছু প্রজাতি আছে ৪, ৬, ১০, ১২—এমনকি ১৬ বছর পরপর ফোটে। বেশির ভাগের বৃদ্ধি সামঞ্জস্যহীন এবং তা চোখে পড়ে না। এসব ফুল যেখানে ফুটন্ত অবস্থায় আছে, সেখানে চা, মসলার চাষ ও ক্রমবর্ধমান নির্মাণকাজ এবং সড়ক প্রশস্তের কারণে সেসব ভূমি কমে যাচ্ছে।

রায় ম্যাথিউ রচিত ‘কুরিঞ্জি: দ্য ফ্লোয়ার অব দ্য ব্লু মাউনটেনস’ বই। ছবি: সংগৃহীত
রায় ম্যাথিউ রচিত ‘কুরিঞ্জি: দ্য ফ্লোয়ার অব দ্য ব্লু মাউনটেনস’ বই। ছবি: সংগৃহীত

নীলাকুরিঞ্জি অর্থ হচ্ছে ‘নীল ফুল বা ব্লু ফ্লোয়ার’। পাহাড়ি ওই সংরক্ষিত এলাকায় এসব ফুলের সমাহার। নীলের ছায়ায় পাহাড়কে কার্পেটের মতো ঢেকে রাখে এসব ফুল। মৌসুমের শেষের দিকে নীলাকুরিঞ্জি বেগুনি রং ধারণ করে। আগস্ট থেকে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এই ফুলের মৌসুম চলে।

যেহেতু ১২ বছরে একবার এই ফুল ফোটে, ফলে এটাকে ‘সুপার ব্লুম’ বলা হয়। নীলাকুরিঞ্জি দেখতে যেতে হবে মুন্নার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে কুরিঞ্জিমালা অভয়ারণ্য সংরক্ষিত এলাকায়।

স্থানীয় পরিবেশবিষয়ক কর্মী আর মোহান বলেন, ফুটন্ত নীলাকুরিঞ্জি দেখা সত্যিই বিশেষ কিছু। কারণ পরবর্তী ১২ বছর এটি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। চাকরি কিংবা বিয়ের কারণে তখন আমি অন্য কোথাও বসবাস করতে পারি। এমনকি এই সময়ের মধ্যে মারাও যেতে পারি।