ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর প্রায় তিন মাস কেটে যাচ্ছে। এখনো নাম বদলের প্রস্তাবের অনুমোদনের সাড়া নেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। তবে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে নাম বদলের প্রক্রিয়া আপাতত সাময়িকভাবে থেমেই গেল।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, যেহেতু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ তাই আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও বাংলা নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে কিনা অথবা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়ে কিনা সে সম্পর্কে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম বদলের ছাড়পত্র পাওয়া গেলে এ নিয়ে মন্ত্রিসভা একটি নামবদলের প্রস্তাবের নোট তৈরি করবে। তারপরে নাম বদলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন বিল পেশ করা হবে ভারতীয় সংসদে। সংসদ অনুমোদন দিলে তা সর্বশেষ অনুমোদনের জন্য চলে যাবে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেই নাম বদলের প্রস্তাব আইনে পরিণত হবে। পশ্চিমবঙ্গের নাম হয়ে যাবে ‘বাংলা’। কিন্তু সেটি হতে কত দিন লাগবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে রয়েছে প্রচণ্ড রাজনৈতিক বিরোধ।

এ বছরের ২৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নাম তিন ভাষাতেই (বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি) ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব গৃহীত হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধান সভায় সর্বসম্মতভাবে। এরপরে সেই প্রস্তাব সহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাগজপত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকার পাঠিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য। কিন্তু সেই প্রস্তাব পাঠানোর পর আজ প্রায় তিনমাস হয়ে গেলেও নাম বদলের প্রস্তাব অনুমোদের কোনও সাড়া নেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এ নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেওয়া হলেও উত্তর মেলেনি এখনো। ফলে এই নাম প্রস্তাবের অনুমোদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
এদিকে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের এক খবরে বলা হয়েছে, এই নাম বদলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত কি তা জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যদিও নাম বদলের এই প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় গৃহীত হওয়ার পর বলা হয়েছে, এই রাজ্যের নতুন নাম হচ্ছে বাংলা। বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি এই তিন ভাষায়ই লেখা হবে পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘ বাংলা’। এর আগে গত বছরের ২৯ আগস্ট রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে বাংলা করার প্রস্তাব পাশ হলেও সেখানে বলা হয়েছিল ইংরেজিতে এই নাম হবে বেঙ্গল আর হিন্দিতে হবে বাঙ্গাল। গত বছরের ২৯ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে যায়। প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১৮৯ ভোট আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার এক চিঠিতে জানান, যে নামই হোক না কেন তা একটিই নাম হতে হবে। বিভিন্ন ভাষায়ও ওই একই নাম রাখতে হবে। ফলে রাজ্য সরকার তিন ভাষায়ই ‘বাংলা’ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশনে সেদিন এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করেন সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রস্তাব পাসের পর সেদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আজ আমাদের কাছে এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলা নামের প্রতি আমাদের আবেগ জড়িত। তাই এই রাজ্যের নাম বাংলা হওয়ায় আমরা গর্বিত। আশা করি রাজ্যবাসীও খুশি। তাই রাজ্যবাসীকে জানাই অভিনন্দন। বাংলা নামে আমরা আজও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই আজ এই রাজ্যবাসীর জন্য এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হল।’
এরপর এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠানো হয় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অনুমোদনের জন্য। রাজ্য সরকার এখনো আশা করছে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত এই নাম পরিবর্তনের অনুমোদন দেবে।
পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় গত ২০১৬ সালের ২ আগস্ট দুটি নামের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলা এবং বঙ্গ। তবে অধিকাংশের মত ছিল ‘বাংলা’ নামের পক্ষে। সেই নামকেই অনুমোদন করেন মমতা। তারপরে তা পেশ করেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে। মমতা আরও বলেন, এখন থেকেই আমরা এই রাজ্যের নাম বাংলা লিখব।
গত ২৬ জুলাই অবশ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের সর্বশেষ প্রস্তাব পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রস্তাব পেশ করে তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলায় হবে বাংলা, ইংরেজিতে বেঙ্গল এবং হিন্দিতে বাঙ্গাল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে একটি নাম। তাই আমরা ‘বাংলা’ই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হিন্দি ও ইংরেজিতেও লিখতে হবে বাংলা।

যদিও ‘বাংলা’ নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। রাজ্যের নাম বাংলা হলে সমস্যা হতে পারে। তাই এই প্রসঙ্গে মমতা আগেই জানিয়ে দেন, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল ঠিকই আছে। পাশে বাংলাদেশ তো একটা দেশ। আর রাজ্যের নাম বাংলা হলে অসুবিধে কোথায়? পাকিস্তানেও পাঞ্জাব আছে, আমাদের দেশেও পাঞ্জাব আছে।’