খাসোগির ছেলের সঙ্গে বাদশাহ ও যুবরাজের সাক্ষাৎ

খাসোগির ছেলে সালাহ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। যুবরাজ সালাহকে সান্ত্বনা দেন। ইমামা প্রাসাদ, রিয়াদ। ছবি: সংগৃহীত
খাসোগির ছেলে সালাহ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। যুবরাজ সালাহকে সান্ত্বনা দেন। ইমামা প্রাসাদ, রিয়াদ। ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যাকাণ্ডের শিকার সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি প্রাসাদে খাসোগির পরিবারের সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, রিয়াদে ইমামা প্রাসাদে খাসোগির ছেলে সালাহ ও তার ভাই সাহেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান । এ সময় বাদশাহ ও যুবরাজ তাদের সান্ত্বনা দেন।

এর আগে সোমবার জামাল খাসোগির ছেলেকে ফোন করে কথা বলেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সময় নিহত খাসোগির ছেলে সালাহকে সান্ত্বনা দিয়েছেন তিনি।

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগির লাশের টুকরো অংশ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে স্কাই নিউজ বলছে, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসাল জেনারেলের বাসভবনের বাগান থেকে খাসোগির লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়।

স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, হত্যার পর খাসোগির লাশ টুকরো টুকরো করা হয়। আরেক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির দাবি, খাসোগির মুখমণ্ডল বিকৃত করে ফেলা হয়। খাসোগির লাশ পাওয়া যায়নি জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বক্তব্য দেওয়ার পর এমন খবর প্রকাশিত হলো। তবে সূত্র কে বা কোথায়, কখন, কীভাবে খাসোগির দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে-তার বিস্তারিত তথ্য জানায়নি স্কাই নিউজ।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এর আগে বলেছিলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যা করা হয়েছে জানানোর পরও কেন একজন ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যাবে না?’খাসোগিকে হত্যা করার বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করার পর এই কথা বলেছিলেন এরদোয়ান।

খাসোগির ছেলে সালাহ ও ভাই সাহেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ইমামা প্রাসাদ, রিয়াদ। ছবি: সংগৃহীত
খাসোগির ছেলে সালাহ ও ভাই সাহেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ইমামা প্রাসাদ, রিয়াদ। ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক জামাল খাসোগি যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, সোমবার তা সরাসরিই স্বীকার করেছে সৌদি আরব। দেশটির দাবি, দুর্বৃত্তরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের জানান, ‘এটা ভয়ানক ভুল ছিল। এ ঘটনার সঙ্গে যুবরাজ জড়িত নন।’ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর মন্তব্যে ঘটনাটি হত্যা বলেই বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘কী ঘটেছিল, এর সবকিছুই আমরা জানতে চাই। এ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে শাস্তি দিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। যে বা যারা এ কাজ করেছে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশের বাইরে এ কাজ করেছে। অবশ্যই এটা মারাত্মক ভুল ছিল। এ ভুলকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল।’

এর আগে সৌদি আরব এক ব্যাখ্যায় বলেছিল, কনস্যুলেটে ‘হাতাহাতির সময় খাসোগি খুন’ হয়েছেন এবং এই ঘটনায় ১৮ সৌদি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। এদিকে নিজ দেশের পার্লামেন্টের বক্তৃতায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, খাসোগির মামলায় তিনি আরও গভীরে যাবেন।

২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতিমান সাংবাদিক খাসোগি। শুরু থেকে তুরস্ক দাবি করেছিল, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদির চররা হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলে দিয়েছে কোথাও। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা নেওয়ার পর রোষানলে পড়েন খাসোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়াশিংটন পোস্ট-এ যুবরাজ সালমানের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লেখেন। অভিযোগ রয়েছে, ‘যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে।’

ঘটনার ১৭ দিন পর গত শনিবার কনস্যুলেট ভবনের ভেতরই সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করেছে সৌদি আরব। এর আগ পর্যন্ত দেশটি খাসোগি নিখোঁজের ব্যাপারে কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছিল। ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে খাসোগির পরিণতির বিষয়ে মুখ খোলে সৌদি কর্তৃপক্ষ।