বাবার মরদেহ ফেরত চান খাসোগির ছেলেরা

নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি
নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি

নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির মরদেহ ফিরিয়ে দিতে তাঁর দুই ছেলে আবেগময় আবেদন জানিয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে খাসোগির ছেলেরা বাবাকে ‘বীর, বিনয়ী ও খুব সাহসী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ভবনে প্রবেশের পর আর ফিরে আসেননি জামাল খাসোগি (৬০)। তাঁকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয়। খাসোগির মৃত্যু নিয়ে এখনো তোলপাড় সারা বিশ্ব।
আজ সোমবার সিএনএন অনলাইনে ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। খাসোগির দুই ছেলে সালাহ খাসোগি (৩৫) ও আবদুল্লাহ খাসোগির (৩৩) সাক্ষাৎকার নেন সিএনএনের সাংবাদিক নিক রবার্টসন।
খাসোগির ছোট ছেলে আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাবার বেলায় যা ঘটেছে, আমি মনে করি তাঁর (খাসোগি) জন্য তা কষ্টদায়ক হয়নি বা এটা (হত্যা) এমন দ্রুত ঘটেছে যে, তাঁর জন্য তা ছিল শান্তিপূর্ণ মৃত্যু।’
তুর্কি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, খাসোগিকে হত্যার জন্য সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে সৌদি চরদের পাঠানো হয়েছে। তুরস্ক এখনো খাসোগির মরদেহ খুঁজে চলেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে তুরস্কের প্রধান রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলির কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, হত্যার পর খাসোগির মরদেহ টুকরা টুকরা করে ফেলা হয়। যদিও মার্কিন সংবাদপত্র ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা লাশ অ্যাসিডে গলিয়ে ফেলা হয়েছে বলে মনে করছেন। সৌদি রাজপ্রাসাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, খাসোগির মরদেহের ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানে না।

সিএনএনকে দুই ভাই বলেন, বাবার মরদেহ না পাওয়ায় তাঁরা সমাহিত করতে পারছেন না।
বড় ছেলে সালাহ বলেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে তাঁকে পরিবারের মৃত সদস্যদের সঙ্গে মদিনার আল বাকি সমাধিস্থলে কবর দিতে চাই। এ নিয়ে আমি সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি আশা করি, এটা দ্রুত হবে’।

খাসোগির মৃত্যুর পর সান্ত্বনা জানাতে বড় ছেলে সালাহ খাসোগিকে রাজপ্রাসাদে ডেকে পাঠান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি
খাসোগির মৃত্যুর পর সান্ত্বনা জানাতে বড় ছেলে সালাহ খাসোগিকে রাজপ্রাসাদে ডেকে পাঠান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি

খাসোগি হত্যা নিয়ে বহু রাখঢাক করা সৌদি আরব খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছে, তার একটি বিবরণ দিয়েছে। সৌদি নাগরিক জামাল খাসোগি গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন তাঁর বিয়েসংক্রান্ত কাগজপত্র নেওয়ার জন্য। তিনি তৃতীয় বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শুরুতে খাসোগির মৃত্যুর বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করা সৌদি আরব আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই খাসোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তবে এ হত্যার সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে।

খাসোগির দুই ছেলের ভাষায়, রাজনৈতিক কারণে তাঁদের বাবাকে ভুল বোঝা হয়েছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। খাসোগিকে প্রকৃত ও সুখী মানুষ এবং ‘চমৎকার’ বাবা হিসেবে বর্ণনা করে সালাহ বলেন, ‘জামাল উদার ছিলেন। তাঁকে সবাই পছন্দ করতেন।’

বাবাকে তাঁরা কীভাবে দেখতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহ বলেন, ‘একজন উদার মনের মানুষ হিসেবে তিনি সবার সঙ্গে মিশতে পারতেন...তিনি দেশকে ভালোবাসতেন, দেশকে অনেক বেশি বিশ্বাস করতেন এবং একে সম্ভাবনাময় মনে করতেন। তিনি ভিন্নমতাবলম্বীর ছিলেন না। তিনি সাম্রাজ্যে বিশ্বাস করতেন এবং মনে করতেন, এটাই দেশকে একসঙ্গে রাখবে। এবং দেশ যে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে তিনি বিশ্বাস রাখতেন।’