দোকানির জন্য ডোনাট কিনতে লম্বা লাইন!

জন-স্টেলার দোকান ডোনাট সিটি। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া
জন-স্টেলার দোকান ডোনাট সিটি। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া

স্বামী-স্ত্রী মিলে চালাতেন ডোনাটের দোকান। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সিল বিচে তাঁদের দোকান। নাম ডোনাট সিটি। দোকান চালিয়েই বয়স্ক এই দম্পতি জীবিকা নির্বাহ করেন। দোকানের কর্মী বলতেও তাঁরা দুজনেই। নাম তাঁদের জন ও স্টেলা চ্যান।

বেশ ভালোই চলছিল চ্যানদের ডোনাটের দোকান। ছন্দপতন ঘটে একদিন। টেবিলের ওপারে আর দেখা মেলে না স্টেলার। প্রথমে নিয়মিত খদ্দেররা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। কিছুদিন পর জানা যায়, অ্যানিউরিজম নামক রোগে ভুগছেন স্টেলা। রক্তনালির জটিলতায় অ্যানিউরিজম রোগ হয়। সেই কারণেই স্টেলা হাসপাতালে ভর্তি।

খদ্দেররা আরও জানতে পারেন, স্ত্রীর সেবা-শুশ্রূষা করতে প্রতিদিনই হাসপাতালে যান ৬২ বছরের জন। কিন্তু কিছুদিন ধরেই তাঁর হাসপাতালে যেতে বেশ দেরি হচ্ছে। কারণ, ডোনাট বিক্রি হতে হতে বেলা গড়িয়ে যায়। সব ডোনাট বিক্রি করার পর চলে হিসাবনিকাশ। এরপর দোকান পরিষ্কার করে হাসপাতালে যেতে যেতে হয়ে যায় দেরি। ততক্ষণ পর্যন্ত একা একাই থাকেন স্টেলা।

এ ঘটনা জানতে পেরেই ডোনাট সিটির খদ্দেররা এক অভিনব কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন। এমনিতেই দোকানটির ডোনাট বেশ সুস্বাদু। সেই সুস্বাদু ডোনাটের কারিগরের সুবিধার জন্য খদ্দেররা সকাল সকাল হাজির হতে থাকেন ডোনাট সিটির সামনে। এমনিতে ভোরে দোকান খুললে তা বন্ধ করতে জনের দুপুর হয়ে যেত। কিন্তু খদ্দেররা স্টেলার কথা ভেবে আগে আসা শুরু করায়, দু-তিন ঘণ্টাতেই খালি হতে থাকে ডোনাটের প্লেট! ফলে স্ত্রীর সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন জন।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, স্টেলার বয়স ৬৩ বছর। কয়েক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ তিনি। ২৮ বছর ধরে চ্যান দম্পতি ডোনাটের ব্যবসা করে আসছেন। সকালের জলখাবার খেতে তাঁদের দোকানে বেশ ভিড় হয়। জন ও স্টেলা গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে কম্বোডিয়া থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসেন। ১৯৯০ সালে তাঁরা ডোনাট সিটি নামের দোকানটি কিনেছিলেন। সেই থেকে চলছে তাঁদের ডোনাটের ব্যবসা।

জন চ্যান বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫০ ডজন ডোনাট বিক্রি হয় ডোনাট সিটিতে। অনেকে একসঙ্গে তিন, চার বা পাঁচ ডজন ডোনাট কিনে ফেলেন। কিছুদিন ধরে সকাল আটটার মধ্যেই দোকান বন্ধ করে ফেলছেন তিনি। কারণ, লাইন ধরে ডোনাট কিনতে আসেন ক্রেতারা। এতে করে দু–তিন ঘণ্টাতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সব ডোনাট। আর জন সকালেই চলে যেতে পারছেন অসুস্থ স্ত্রীর পাশে।

ডোনাট সিটির নিয়মিত ক্রেতা জিনি রজার্স। স্থানীয় অধিবাসী জিনি ২০ বছর ধরে এই দোকানের ডোনাট খাচ্ছেন। সকাল সকাল ডোনাট কিনতে আসার বুদ্ধিটা জিনি ও তাঁর কয়েক বন্ধুর। তাঁরাই সবাইকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন। জিনি বলেন, জন ও স্টেলা খুবই বিনয়ী মানুষ। সব সময় হাসিমুখে থাকেন তাঁরা।

জন জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন স্টেলা। কিছুদিন আগেও চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। তবে এখন তিনি কথা বলতে পারছেন। খদ্দেরদের কাছে এমন অভিনব সাড়া পেয়ে অভিভূত জন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।