আহমেদাবাদের নাম পাল্টে হচ্ছে কর্ণাবতী?

নিজেদের শাসিত রাজ্যের বহু ঐতিহাসিক স্থানের নাম বদলের খেলায় মেতেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হিন্দুত্ববাদকে আঁকড়ে রাখার খেলায় অবতীর্ণ হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। সামনের লোকসভা নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদকে আরও বেশি প্রচারে রাখার জন্যই মোদি এই কাজ করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতে জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ। বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের নাম বদলে ভূমিকা রাখছেন। উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক মোঘলসরাই স্টেশনের নাম বদল করে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবার যোগী বদলে দিলেন ঐতিহাসিক ফৈজাবাদের নাম, রাখলেন অযোধ্যা।

আর এবার যোগী আদিত্যনাথের পথ ধরে নাম বদলের খেলায় নেমেছে নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাট। গুজরাটের পুরোনো রাজধানী আহমেদাবাদের নাম বদল করার উদ্যোগ নিয়েছে গুজরাটের বিজেপির নেতৃত্বাধীন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানির সরকার। সুপ্রাচীন এই বাণিজ্যিক শহর আহমেদাবাদের নাম পাল্টে কর্ণাবতী রাখার উদ্যোগ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন গুজরাটের উপমুখ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেল। তিনি গত মঙ্গলবার রাজধানী গান্ধীনগরে বলেছেন, আইনি বাধা না থাকলে আহমেদাবাদকে কর্ণাবতী করা হবে।

গুজরাটের সবরমতী নদীর তীরে অবস্থান আহমেদাবাদ শহরের। এই শহরের একাদশ শতাব্দীর আগে নাম ছিল আশাপল্লী। এরপর চৌলুক্য বংশের রাজা কর্ণ এই শহর আক্রমণ করে দখল করে নেন। এরপর রাখা হয় কর্ণাবতী। তাঁর রাজত্বকালে এই শহরকে রাজধানী ঘোষণা করেন তিনি। এরপর ১৪১১ সালে প্রথম আহমেদ শাহ এই শহরকে সাজিয়ে তোলেন। শহরটি গুজরাটের একটি বাণিজ্যিক শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। কর্ণাবতীর পরিবর্তে এরপর রাখা হয় আহমেদাবাদ।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবার গুজরাট রাজ্য সরকার চাইছে অতীতের কর্ণাবতী নামকে ফিরিয়ে আনতে। তাই গত মঙ্গলবার গুজরাটের উপমুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের কথা বলেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি সরকারও চাইছে আহমেদাবাদ শহরের নাম বদলে কর্ণাবতী রাখতে। কিন্তু এই নাম বদলের প্রস্তাবের সমালোচনা করে গুজরাট কংগ্রেসের মুখপাত্র মনীশ যোশী বলেছেন, ‘আহমেদাবাদের নতুন নামকরণ বিজেপির নির্বাচনী চাল। এতে হিন্দু ভোট এককাট্টা করার কৌশল বিজেপির। এসব ইস্যু নিয়ে এবার ভোটে লড়তে চাইছে বিজেপি। এতে অবশ্য বিজেপি হিন্দুদেরই ঠকাতে চাইছে।’

দুই দিন আগে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দীপাবলি উৎসবের সূচনা করতে গিয়েছিলেন অযোধ্যায়। সেখানেই তিনি ৩ লাখ প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ফৈজাবাদের নাম বদলে হবে অযোধ্যা। যোগী উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক শহর এলাহাবাদের নাম বদল করে রাখেন প্রয়াগরাজ। এই নাম বদল করে যোগী বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকার। এই ঘটনার জেরে এবার নাম বদলের আরও দাবি উঠে এসেছে। যদিও এর আগে গুরু গাঁয়ের নাম বদলে নতুন নাম হয়েছে গুরুগ্রাম। ১৯৯৬ সালে মুম্বাদেবীর নামে বোম্বাইর নাম বদলে হয়েছে মুম্বাই। ২০১৪ সালে কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালোরের নাম বদলে হয়েছে বেঙ্গালুরু। ম্যাঙ্গালোর হয়েছে মেঙ্গালুরু। ২০১১ সালে উড়িষ্যা হয়েছে ওডিশা। একই বছর পণ্ডিচেরীর নাম বদলে হয়েছে পদুচেরি। আর ক্যালকাটা হয়েছে কলকাতা। এবার নতুন করে দাবি উঠেছে, আহমেদাবাদের নাম কর্ণাবতী, মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের নাম শম্ভাজি নগর, হায়দরাবাদের নাম দেবীভাগ্যলক্ষ্মী, মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের নাম ভোজপাল, সিমলার নাম শ্যামলা।