দাবার চালে সম্প্রীতির বন্ধন

পূর্ব লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ-বাংলা চেস অ্যাসোসিয়েশন (বিবিসিএ) আয়োজিত দাবা প্রতিযোগিতা। প্রায় ৯০ জন দাবাড়ু এতে অংশ নেন। ছবি: প্রথম আলো
পূর্ব লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ-বাংলা চেস অ্যাসোসিয়েশন (বিবিসিএ) আয়োজিত দাবা প্রতিযোগিতা। প্রায় ৯০ জন দাবাড়ু এতে অংশ নেন। ছবি: প্রথম আলো

হলভর্তি মানুষ। তবে কোনো সাড়াশব্দ নেই। গভীর ধ্যানে টেবিলে চোখ ফেলে সারি সারি বসা সবাই। দাবার বোর্ডে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে একে অন্যকে আক্রমণে ব্যস্ত তাঁরা। বুদ্ধির ক্ষিপ্রতায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এই খেলাই জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে দিয়েছে। গত রোববার ব্রিটিশ-বাংলা চেস অ্যাসোসিয়েশন (বিবিসিএ) আয়োজিত দাবা প্রতিযোগিতার এমন বিরল দৃশ্যই দেখা গেল।

পূর্ব লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এবারের প্রতিযোগিতা। প্রায় ৯০ জন দাবাড়ু এতে অংশ নেন। বার্মিংহাম, অক্সফোর্ডসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন দূরদূরান্তের শহর থেকে এসেছেন অনেকে। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। অংশগ্রহণকারী দাবাড়ুদের মধ্যে ছিলেন ১ জন গ্র্যান্ড মাস্টার, ১ জন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার এবং ৫ জন ফিডে মাস্টার।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত দাবাপ্রেমী বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘ব্রিটিশ-বাংলা চেস অ্যাসোসিয়েশন’ তৃতীয়বারের মতো এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ‘বিবিসিএ ফিডে র‍্যাপিড প্লে ২০১৮’ শীর্ষক এই প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক মানের এবং খেলোয়াড়দের স্কোর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিং নির্ধারণে বিবেচিত হয়।

দুটি বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় এবারের টুর্নামেন্ট। শক্তিশালী খেলোয়াড়েরা অংশ নিয়েছেন ‘ওপেন সেকশনে’। আর অনূর্ধ্ব ফিডে ১৮০০ রেটিং-এর খেলোয়াড়েরা ‘মেজর’ সেকশনে অংশ নেন।

দিনব্যাপী এই আয়োজনে সুইস পদ্ধতিতে মোট ছয় রাউন্ড খেলা অনুষ্ঠিত হয়। উচ্চতর বিভাগে (ওপেন সেকশন) ছয় পয়েন্টের মধ্যে সাড়ে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার জাপোইস্কি আনতানাস। পাঁচ পয়েন্ট পেয়ে যৌথভাবে রানার আপ হয়েছেন গ্র্যান্ড মাস্টার বোগদান লালীচ এবং বিবিসিএর সদস্য ফিডে মাস্টার জভিকা রাদোভানোভিচ।

এ ছাড়া এই বিভাগে অনূর্ধ্ব ২১০০ ফিডে রেটিং প্রাইজ পেয়েছেন ফিলিপ মেইকপিস ও ফ্রান্সিসকো সালেরনো। এই বিভাগে অনূর্ধ্ব ১৯০০ রেটিং প্রাইজ পেয়েছেন গোলাম আলী পারভেজ ও শাহজাহান সাইদ। ওপেন বিভাগে বিবিসিএ বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম হীরক।

প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বার্মিংহাম, অক্সফোর্ডসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন দূরদূরান্তের শহর থেকে এসেছেন অনেকে। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। ছবি: প্রথম আলো
প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বার্মিংহাম, অক্সফোর্ডসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন দূরদূরান্তের শহর থেকে এসেছেন অনেকে। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। ছবি: প্রথম আলো

দ্বিতীয় বিভাগে (মেজর) পাঁচ পয়েন্ট পেয়ে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হন বিবিসিএর সদস্য আহমেদুল হক, টিম ভ্যালেন্টাইন, মহসিন আবেদিয়ান ও ড্যারেক হার্ভি। এ বিভাগে অনূর্ধ্ব ১৬০০ রেটিং প্রাইজ পেয়েছেন বিবিসিএ-এর হোরহে আপাজা, লুকাস পিয়েচা ও তামার পঙ্কজ। অনূর্ধ্ব ১৪৫০ রেটিং প্রাইজ পেয়েছেন ডেভিড নাইট, জেমস হার্টম্যান ও অনূর্ধ্ব ১৩০০ রেটিং প্রাইজ পেয়েছেন গুল কাপুর। মেজর বিভাগে বিবিসিএ বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন দরবেশ চৌধুরী। এ ছাড়া অনূর্ধ্ব ১৬ বছরের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিশেষ প্রাইজ পেয়েছেন অ্যামিলি মেইটন।

টুর্নামেন্টের প্রধান আর্বিটারের দায়িত্ব পালন করেন যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য আর্বিটার এডাম রাউফ। সহযোগী আর্বিটার ছিলেন মাইক্যাল ফ্ল্যাট। প্রধান উপদেষ্টা আবু মুসা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী বাঙালি দাবাড়ুদের উদ্যোগে মাত্র তিন বছর আগে বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে বিবিসিএ যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় দাবা দলের কয়েকজন সাবেক খেলোয়াড়ও আছেন। বিবিসিএ-এর আয়োজনে বিভিন্ন জাতি-বর্ণের মানুষের সম্মিলন একটি বড় ব্যাপার।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এতে অতিথি ছিলেন রেডব্রিজ কাউন্সিলের ডেপুটি হুইপ কাউন্সিলর সৈয়দা সায়মা আহমেদ, ক্যাপিট্যাল কিডস ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী ও লন্ডন টাইগার্স ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম রতন, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেইন, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী প্রমুখ।