সুপ্রিম কোর্টে রাফাল নিয়ে যুক্তিতর্ক, নির্দেশনা নেই

রাফাল কেনাবেচা দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কী নির্দেশ দেবেন, বুধবার টানা চার ঘণ্টা শুনানির পরেও সর্বোচ্চ আদালত তার কোনো ইঙ্গিত দিলেন না। বরং যুদ্ধবিমানের খুঁটিনাটি আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে কি না, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেই প্রশ্ন তুলে দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
রাফাল কেনাবেচা দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কী নির্দেশ দেবেন, বুধবার টানা চার ঘণ্টা শুনানির পরেও সর্বোচ্চ আদালত তার কোনো ইঙ্গিত দিলেন না। বরং যুদ্ধবিমানের খুঁটিনাটি আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে কি না, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেই প্রশ্ন তুলে দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

রাফাল কেনাবেচা দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কী নির্দেশ দেবেন, বুধবার টানা চার ঘণ্টা শুনানির পরেও সর্বোচ্চ আদালত তার কোনো ইঙ্গিত দিলেন না। বরং যুদ্ধবিমানের খুঁটিনাটি আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে কি না, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেই প্রশ্ন তুলে দেওয়া হলো। শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল সর্বোচ্চ আদালতকে বলেন, এ কাজ একান্তই বিশেষজ্ঞদের।

ফ্রান্সের কাছ থেকে অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান কেনাবেচার প্রসঙ্গটি বেশ কিছুদিন ধরেই বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল হয়েছে একাধিক জনস্বার্থ মামলা। সেই মামলাগুলো একত্র করে আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এস কে কল ও বিচারপতি কে এম যোসেফের এজলাসে টানা চার ঘণ্টা শুনানি চলে। চুক্তি করায় পদ্ধতিগত কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, সেটা যেমন আদালতের বিচার্য বিষয়, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে দামসংক্রান্ত তথ্য আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রাথমিক টালবাহানার পর গত সোমবার সেই তথ্য মুখবন্ধ খামে সরকার আদালতে পেশ করে।

বুধবার শুনানির সময় এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, খামে কী তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা তিনিও জানেন না। তিনি বলেন, দামসহ যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি প্রকাশ্য হলে শত্রু দেশ তার সুযোগ নিতে পারে। সর্বোচ্চ আদালতকে তিনি মনে করিয়ে দেন, এ কাজ বিশেষজ্ঞদের। আদালতের বিচার্য হতে পারে না।

মামলাকারীদের অভিযোগ, আগের কংগ্রেস সরকার ৭৯ কোটি রুপি খরচ করে ১২৬টি রাফাল কেনার বিষয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কথা চালাচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফ্রান্স সফরে গিয়ে পুরোনো খসড়া খারিজ করে ৫৯ কোটি রুপিতে ৩৬টি রাফাল কেনার কথা ঘোষণা করেন। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই ঘোষণা সরকারি পদ্ধতি মেনে হয়নি। আরও অভিযোগ, চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদি পক্ষপাতিত্ব করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পরিবর্তে সুবিধে পাইয়ে দিয়েছেন বেসরকারি সংস্থাকে। সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের আবেদন, এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। চার ঘণ্টা শুনানি সত্ত্বেও সর্বোচ্চ আদালত বুধবার এ বিষয়ে নীরব থেকেছেন।

তবে আদালতের নির্দেশে বুধবার হাজির হয়েছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভাইস মার্শাল টি চলপতি, এয়ার মার্শাল ভি আর চৌধুরী, ডেপুটি চিফ অব দ্য এয়ার স্টাফ এয়ার মার্শাল খোসলাসহ অন্য পদস্থ কর্মকর্তারা। রাফালের প্রয়োজনীয়তা, দেশে কী ধরনের যুদ্ধবিমান তৈরি হচ্ছে? সেসব নিয়ে বিচারপতিরা তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। সাবেক বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ শৌরি এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, যাঁরা রাফালের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে মামলা করেছেন, তাঁদের বক্তব্যও সর্বোচ্চ আদালত শোনেন। তাঁরা বলেন, প্রযুক্তিগত কোনো তথ্য তাঁরাও জানতে আগ্রহী নন, যেহেতু এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত। কিন্তু দাম জানানোর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

রাফালের প্রস্তুতকারী সংস্থা দাসো তার ‘অফসেট’ পার্টনার হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারতীয় শিল্পপতি অনিল আম্বানির এক সংস্থাকে। অভিযোগ, সরকারি সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডকে (হ্যাল) বঞ্চিত করে আম্বানির সংস্থার সঙ্গে দাসোকে চুক্তিবদ্ধ হতে প্রভাব খাটিয়েছে মোদি সরকার। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওঁলাদ এ বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, অফসেট পার্টনার পছন্দের বিষয়টি সম্পূর্ণই দাসোর সিদ্ধান্ত। ভারত সরকারের কোনো ভূমিকা তাতে ছিল না।

আশির দশকের শেষের দিকে বোফর্স কামান কেনাবেচায় দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল ভারতীয় রাজনীতি। সাড়ে তিন দশক পর ভোটের মুখে রাফালকে কেন্দ্র করে রাজনীতি ফের উত্তাল।