রাত পোহাতেই মে'র মন্ত্রিসভায় বিপর্যয়

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বুধবার রাতে সহাস্যে জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু রাত পেরিয়ে সকাল হতেই উল্টে গেল সবকিছু। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বুধবার রাতে সহাস্যে জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু রাত পেরিয়ে সকাল হতেই উল্টে গেল সবকিছু। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বুধবার রাতে সহাস্যে জানালেন, ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) চুক্তি সম্পাদনে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু রাত পেরিয়ে সকাল হতেই উল্টে গেল সবকিছু। আজ বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে পদত্যাগ করেন খোদ ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডোমিনিক রাব। এর ঘণ্টা খানের মাথায় পদত্যাগ করেন কর্ম ও পেনশন বিষয়ক মন্ত্রী এসথার ম্যাকভি। পদত্যাগ করেছেন আরও তিন প্রতিমন্ত্রী। সব মিলিয়ে থেরেসা মে’র মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে গেল।

এ অবস্থায় একেবারে শেষ বেলায় এসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ প্রশ্নে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হলো। পদত্যাগী মন্ত্রীরা খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তিকে যুক্তরাজ্যের স্বার্থবিরোধী এবং জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন। পদত্যাগ করা তিন প্রতিমন্ত্রী হলেন—নর্দান আয়ারল্যান্ড বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিলেশ ভারা, ব্রেক্সিট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সুলা ব্রাভারম্যান ও পার্লামেন্টারি প্রাইভেট সেক্রেটারি অ্যান মারি। পদত্যাগের এই তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে আশঙ্কা।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের দর-কষাকষির পর ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ প্রশ্নে একটি খসড়া সমঝোতায় পৌঁছায় উভয় পক্ষ। যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাভের পর এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা। বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রায় ৫ ঘণ্টা টানা বৈঠক শেষে মে জানান, চুক্তি স্বাক্ষরে তিনি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছেন। কিন্তু বৈঠক সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে-অন্তত ১০ জন মন্ত্রী চুক্তির বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। বৃহস্পতিবার সকালের ঘটনায় চুক্তি নিয়ে আপত্তির বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল।

লক্ষণীয় হলো—ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডোমিনিক রাবের পদত্যাগ। কেননা, ৫৮৫ পৃষ্ঠার ওই চুক্তির খসড়া তৈরিতে তিনি নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া এটি ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রীর পদত্যাগের দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে গত জুলাই মাসে ডেভিড ডেভিস পদত্যাগ করলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ডোমিনিক রাব। ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও একই কারণে পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগ পত্রে ডোমিনিক রাব বলেন, এই চুক্তি নর্দান আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের বাকি তিন রাজ্যের মধ্যে আইনগত দূরত্ব তৈরি করবে, যা তিনি বিবেক থাকতে সমর্থন দিতে পারেন না। বিবিসি’র নর্মান স্মিথ বলেন, রাবের পদত্যাগ অন্যান্য মন্ত্রীদের পদত্যাগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিল। আর ব্রেক্সিটপন্থী সাবেক মন্ত্রী ইয়ান ডানকান স্মিথ বলেন, রাবের পদত্যাগ থেরেসা মে’র জন্য ‘ধ্বংসাত্মক’।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ব্রেক্সিট বিরোধী এমপি অ্যানা সোবরি বলেছেন, রাবের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চুক্তিটি শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাজ্যের এখনই জাতীয় সরকার গঠন করা দরকার।

এমন বিপর্যয়ের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী মে বৃহস্পতিবার সংসদে চুক্তির বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি স্বীকার করেন চুক্তিতে প্রত্যাশার সবটুকু প্রতিফলন ঘটেনি। তবে এটি যুক্তরাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় সক্ষম হয়েছে বলে তাঁর মন্তব্য। মে বলেন, শিগগিরই তিনি চূড়ান্ত চুক্তি পার্লামেন্টের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করবেন। সাংসদেরা এটির অনুমোদন না দিলে যুক্তরাজ্য চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের বিপর্যয়ে পড়বে বলে সতর্ক করেন তিনি।

জবাবে লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। এই চুক্তি জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। তিনি বলেন, বাজে চুক্তি ও চুক্তিহীন বিচ্ছেদের বিপর্যয়—এই দুইয়ের মধ্যে বাছাইয়ের পরীক্ষায় ফেলতে পারেন না মে।

ব্রেক্সিটের খসড়া চুক্তিতে বলা আছে, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকর হবে। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে আরও ২১ মাস বর্তমান সম্পর্ক বজায় থাকবে। উভয় পক্ষ ভবিষ্যৎ বাণিজ্য এবং অন্যান্য আদান-প্রদানের সম্পর্ক নির্ধারণে ব্যর্থ হলে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার মেয়াদ আরও বাড়বে। ফলে প্রকৃত বিচ্ছেদ কবে ঘটবে, তার কোনো উল্লেখ নেই। অন্যদিকে আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে উপযুক্ত সমাধান না হলে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের পরও নর্দান আয়ারল্যান্ড ইইউ আইনের অধীনে থাকবে। তখন যুক্তরাজ্যের বাকি অংশকেও ইইউ’র কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। এসব নিয়েই গৃহবিবাদ যুক্তরাজ্যে।