১৯ বছর ধরে নদী সাঁতরে স্কুলে যাচ্ছেন এক শিক্ষক

নদী সাঁতরে স্কুলে যাচ্ছেন আব্দুল মালিক। ছবি: সংগৃহীত
নদী সাঁতরে স্কুলে যাচ্ছেন আব্দুল মালিক। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেরালা রাজ্যের মাল্লাপুরম জেলার পদিমজাত্তুমুড়ি নামে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করেন আবদুর মালিক। চাকরি করেন এই জেলারই মুসলিম লোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলটির তিনদিকে রয়েছে কাদালুন্দিপুঝা নদী।

আবদুর মালিকের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। সড়কপথে যেতে হলে প্রথমে মিনিট দশেক হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয়। এরপর দুইবার বাস পাল্টাতে হয়। পরে বাস থেকে নেমে হাঁটতে হয় আরও ২ কিলোমিটার, তবেই স্কুল। ১৯৯২ সাল থেকে এই স্কুলে শিক্ষকতার করছেন আব্দুল মালিক। ছোট ছোট শিশুদের অঙ্ক শেখান তিনি।

চাকরি নেওয়ার পর থেকে সড়কপথেই স্কুলে যেতেন আব্দুল মালিক। প্রতিদিন এক যুদ্ধ। কষ্ট তো আছেই, একই সঙ্গে সময় এবং অর্থ দুটোই লাগত অনেক। যেতে আসতে ৬ ঘণ্টা লেগে যেত। এক সময় স্কুলের অন্য শিক্ষকেরা আব্দুলকে পরামর্শ দেন, এভাবে কষ্ট করে না এসে আব্দুল স্কুলের কাছের নদীটি সাঁতরে আসতে পারেন তবে তার আর কোনো খরচ হবে না। সময়ও কম লাগবে।

পরামর্শটি কাজে লাগায় আব্দুল মালিক। শুরু হয় তাঁর নতুন জীবন। বাড়ি থেকে স্কুলের পোশাক, বইপত্র, কাগজ কলমসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস প্লাস্টিকের ব্যাগে বেঁধে নিয়ে প্রতিদিন সকালে চলে আসেন নদীর তীরে। তারপর গামছা পরে নদী সাঁতরে বিদ্যালয়ের কাছের পাড়ে এসে পৌঁছান তিনি। কাপড়চোপড় বদলে বিদ্যালয়ে যান। এভাবেই চলছে ১৯ বছর। ৪৫ বছরের আব্দুল মালিক এখনো ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক।

এত কষ্ট হলেও কখনো এই স্কুল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেননি আব্দুল মালিক। এই স্কুলই যেন তাঁর আপন নিবাস। একদিনও অনুপস্থিত থাকেননি তিনি।

আব্দুল মালিক বলেন, স্কুল থেকে যে বেতন দেয় তাতেই আমি সন্তুষ্ট। আমি ভালো আছি। স্কুলে সাঁতরে যেতে কোনো কষ্ট হয় না আমার। অভ্যাস হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের ছাত্ররা, সব শিক্ষকেরা আমাকে দারুণ ভালোবাসেন।

প্রতিদিন সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে বের হন আব্দুল মালিক। হাঁটাপথ আর নদী সাঁতরে পৌঁছান স্কুলে। তারপর ক্লাস সেরে আবার বাড়ি। এভাবেই চলছে এই শিক্ষকের জীবনসংগ্রাম।