পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্র প্রদেশে সিবিআইয়ের দরজা বন্ধ

চন্দ্রবাবু নাইডু ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
চন্দ্রবাবু নাইডু ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য সরকার রাজনীতিতে এক নয়া ফরমান জারি করে চমক এনেছে। ওই দুই রাজ্যে রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই ঢুকতে পারবে না।

সিবিআই নিয়ে প্রথম চমক দেন ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। তিনি তেলেগু দেশম পার্টির নেতা। অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ছিলেন বিজেপির নেতৃত্বে গড়া এনডিএ জোটের শরিক। বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধে তিনি এনডিএ ছাড়েন। ৮ নভেম্বর রাজ্যের অনুমতি ছাড়া সিবিআই ঢুকতে পারবে না বলে ঘোষণা দেন তিনি। গতকাল শুক্রবার একই ঘোষণা দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও একসময় এনডিএর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন বিজেপি তাঁর ঘোর ‘শত্রু’। এই দুই মুখ্যমন্ত্রী পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যে সিবিআইয়ের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে বিনা অনুমতিতে কোনো মামলার তদন্ত করতে পারবে না সিবিআই। তল্লাশির নামে কোনো সরকারি অফিস ঘেরাও করতে পারবে না। কাউকে তদন্তের নামে বিনা অনুমতিতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে না।

সিবিআই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। এ সংস্থাই ভারতের বড় বড় আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে। পশ্চিমবঙ্গে সারদা, রোজভ্যালি ও নারদ ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার তদন্ত করছে। রাজনৈতিক হত্যাসহ বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত করে সিবিআই। দুই রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্র প্রদেশের রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, মমতা ও চন্দ্রবাবু নাইডু নিজেদের দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষার জন্য এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।

মমতা তাঁর দলের কোর কমিটির বৈঠকে গতকাল উপস্থিত ছিলেন কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে। তিনি বলেন, বিজেপি ইতিহাস বদল করছে, নাম বদল করছে, কিন্তু গেম বদল করতে পারবে না। দেশ আজ বিপদের মধ্যে রয়েছে। ওরা এমন ভাবটা করছে যেন, দেশটার ওরাই জন্ম দিয়েছে। স্বাধীনতার লড়াইয়ের সময় তাঁদের যেন কোনো অস্তিত্বই ছিল না। চন্দ্রবাবু নাইডু যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সঠিক।

বৈঠক শেষে মমতা রাজ্য সচিবালয় নবান্নে গিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারপর অন্ধ্র প্রদেশের মতো সিবিআই প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে বাতিল করেন ১৯৮৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গৃহীত এ–সংক্রান্ত অনুমতির আদেশকে।

এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, বিরোধী দলে থাকার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথায় কথায় সিবিআই দাবি করতেন। ইতিহাসের কী পরিহাস! নবান্ন এখন নিজেদের বাঁচাতে ব্যস্ত। রাজ্যের মানুষকে বাঁচাবে কি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়েছেন। যে মমতা পান থেকে চুন খসলে সিবিআই চাইতেন, তিনিই আজ সিবিআই আটকাচ্ছেন।

সেলিম আরও বলেন, কলকাতা পুলিশ ও সিআইডির নিরপেক্ষতা নেই। এই মমতাই মোদিকে ম্যানেজ করে নেতাদের জামিন পাইয়ে দিচ্ছেন।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা ও কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান বলেছেন, আগে থেকেই আইনের সংস্থান রয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। তবে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে মমতা আটকাতে পারবেন না সিবিআইকে। যদিও এখন সিবিআইকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে দিয়েছে মোদি সরকার; অথচ কংগ্রেসের জমানায় সিবিআই নিরপেক্ষ ছিল।