খাসোগি হত্যায় শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার নেপথ্যে কলকাঠি কে নেড়েছিলেন, শুরু থেকে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল। অতি সুরক্ষিত স্থানে এমন ‘উঁচু দরের মানুষকে’ মেরে ফেলা যে ‘অতি প্রভাবশালী ব্যক্তির’ পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সম্ভব নয়, তা সহজেই বোঝা যায়।
শুরুতে তুরস্ক এবং সবশেষ শুক্রবার মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ নেপথ্য ব্যক্তির নাম ‘এমবিএস’ বলে জানিয়েছে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ‘এমবিএস’ নামেই সমধিক পরিচিত। হত্যার পরিকল্পনা হিসেবে ভাইকে দিয়ে ফোন করিয়ে তিনি খাসোগিকে তুরস্কে নিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছে সিআইএ।
নিজ দেশের এমন নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ও তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদের সখ্য কে না জানে। এ অবস্থায় খাসোগি হত্যারহস্যের যবনিকাপাত টানতে আরও কিছুটা সময় নিয়েছেন তিনি। যুবরাজ মোহাম্মদকে হত্যার জন্য দায়ী করে সিআইএর প্রতিবেদনের ব্যাপারে এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাসোগিকে হত্যা করা হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার ভয়াবহ দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মালিবু পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘দুদিনের মধ্যে সম্ভবত সোম বা মঙ্গলবার আমরা পূর্ণ প্রতিবেদনটি পেতে যাচ্ছি’।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আকর্ষণীয় মিত্র। আমাকে সেটা দেখতে হয়। আপনারা জানেন, আমি প্রেসিডেন্ট—আমাকে অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হয়।’

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি

যদিও এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্টের এক বক্তব্যে খাসোগি হত্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আভাস পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এখনই এমন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না। খাসোগি হত্যার ঘটনায় এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি। 

নুয়ার্ট জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখেই এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করবে। ইতিমধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাসহ অন্যান্য বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসন খাসোগি হত্যায় ভূমিকা থাকার অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সিআইএর প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। যুবরাজ মোহাম্মদের ভাই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন সালমান ফোন করেছিলেন খাসোগিকে। মার্কিন গোয়েন্দাসহ সিআইএ এই ফোনকল বিশ্লেষণ করে জেনেছে, খালিদ বিন সালমান খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবন থেকে কাগজপত্র আনার জন্য যেতে উৎসাহিত করেছিলেন। সূত্রমতে, খালিদ তাঁর ভাইয়ের নির্দেশে ওই ফোন করেছিলেন।

নিহত সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি
নিহত সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে গত ২ অক্টোবর ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক খাসোগি। শুরু থেকে তুরস্ক দাবি করে আসছে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদি চরেরা হত্যা করেছে। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর রোষানলে পড়েন খাসোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।

ওয়াশিংটন পোস্টে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লেখেন খাসোগি। অভিযোগ উঠেছে, যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব স্বীকার করে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। তবে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে স্বীকার করলেও এতে রাজপরিবার জড়িত নয় বলে দাবি করছে সৌদি আরব। এখন পর্যন্ত খাসোগির মরদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সৌদি আরবও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।

আরও পড়ুন