খাসোগি হত্যার পর প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন বাদশাহ সালমান

বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ।
বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ।

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ তাঁর দেশের বিচার বিভাগের প্রশংসা করেছেন। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে চাপের মুখে বিচারপ্রক্রিয়া যখন অগ্রগতি হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে খাসোগি হত্যার পর প্রথমবারের মতো মুখ খুলে এই প্রশংসা করলেন বাদশাহ সালমান। 

গত মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর গত সোমবার সৌদির সুরা কাউন্সিলে সৌদি বাদশাহ সালমান বলেন, তাঁর দেশ কখনো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা থেকে বিচ্যুত হবে না।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সুরা কাউন্সিলে কথা বলার সময় বাদশা সালমান খাসোগি হত্যার ঘটনা সরাসরি উল্লেখ না করে তা এড়িয়ে গেছেন। এদিকে জামাল খাসোগি হত্যার সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত থাকার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে সৌদি। তবে রিয়াদ সরকার বলছে, এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে জামাল খাসোগি খুন হয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ৩৩ বছর বয়সের সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত। অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। 

সুরা কাউন্সিলে ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘ইসলামিক ন্যায়বিচারের নীতি ও সমতার ভিত্তিতে রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং আমরা গর্বিত যে বিচার বিভাগ ও পাবলিক প্রসিকিউশনে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে এই দেশ কখনো আল্লাহর নীতি ও ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন থেকে বিচ্যুত হবে না।’

বাদশাহ তাঁর বক্তৃতায় ইরান ও সৌদি আরবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী উপসাগরীয় অঞ্চলের সমালোচনা করেন। একই সঙ্গে তেলের বাজার স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা ও ইয়েমেন যুদ্ধ নিরসনে জাতিসংঘের প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানান। 

জামাল খাসোগি হত্যার পর থেকে কঠিন আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও তাঁর দেশে কোনো কিছু হয়নি বলে মনে করেন বাদশাহ সালমান। ওই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় সৌদি নাগরিকদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি। 

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে গত ২ অক্টোবর ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক খাসোগি। শুরু থেকে তুরস্ক দাবি করে আসছে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদি চরেরা হত্যা করেছেন। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর রোষানলে পড়েন খাসোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। 

ওয়াশিংটন পোস্টে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লেখেন খাসোগি। অভিযোগ উঠেছে, যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব স্বীকার করে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। তবে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে—স্বীকার করলেও এতে রাজপরিবার জড়িত নয় বলে দাবি করছে সৌদি আরব। এখন পর্যন্ত খাসোগির মৃতদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর দেহের টুকরো-টুকরো অংশের সন্ধান মিলেছে। 

যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে খাসোগি হত্যায় ভূমিকা থাকার অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। খাসোগি হত্যা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।