বাঙালিরাও আসামের, দাবি বিজেপি বিধায়কের

আসামের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব। ছবি: প্রথম আলো
আসামের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব। ছবি: প্রথম আলো

‘বাঙালিরাও অসমিয়া! আসামে বাস করলে সকলেই অসমিয়া।’ এমন দাবি করেছেন আসামের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব। চলতি বছরে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) প্রকাশ হওয়ার পর সংকটে রয়েছেন আসামের বাঙালিরা। ৪০ লাখের বেশি মানুষের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আসামের বেশ কয়েকটি সংগঠন ‘বিদেশি খেদাও’-এর ডাক দিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন আসাম সরকারও ঘোষণা দিয়েছে ‘বিদেশিমুক্ত’ রাজ্য গঠনের। আসাম সরকারের দিনপঞ্জিতেই পরিষ্কার করে ছাপা হয়েছে ‘বিদেশিমুক্ত’ লক্ষ্যের কথা। বিদেশি বলতে আসামে মূলত বাঙালিদেরই ধরা হয়।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও (বাঙালি) তো অসমিয়া। বংশপরম্পরায় আমরাও আসামের বাসিন্দা। ভাষা ভিন্ন হতে পারে। অন্য গোষ্ঠীর হতে পারি। আমাদের পরিচয় তো অসমিয়াই।’ শুধু এমন দাবিই নয়, বাঙালি হিন্দুদের নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন নতুন সংগঠন ‘অসমিয়া পরিচয়’।

শিলাদিত্যের দাবি, ‘আসামে বসবাসকারী সকলেই “অসমিয়া”। আর এটা ভাবলেই রাজ্য বিভাজনের দাবিকে নস্যাৎ করা যাবে।’

হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী এই বিধায়ক বলেন, ‘এই রাজ্যে হিন্দুরা সবাই নিরাপদ। নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে সবারই থাকবে বসবাসের অধিকার।’

আসাম সরকারের দিনপঞ্জিতেই পরিষ্কার করে ছাপা হয়েছে ‘বিদেশিমুক্ত’ লক্ষ্যের কথা। ছবি: প্রথম আলো
আসাম সরকারের দিনপঞ্জিতেই পরিষ্কার করে ছাপা হয়েছে ‘বিদেশিমুক্ত’ লক্ষ্যের কথা। ছবি: প্রথম আলো

তবে আসামে মুসলিম বিদেশিদের থাকা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন শিলাদিত্য। তিনি বলেন, ‘তাঁদের জন্য (মুসলিম) রয়েছে দুটি দেশ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। তাই আসামে তাঁদের জায়গা দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। একাত্তরের বদলে মুসলিমদের জন্য ভিত্তি বছর ধরা উচিত ১৯৪৭–এর ১৫ আগস্ট।’ আসামে বহিরাগতদের নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ভিত্তি বছর ধরা হচ্ছে ১৯৭১-এর ২৪ মার্চ।

শিলাদিত্যের এ দাবি ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতির সভাপতি তপোধীর ভট্টাচার্য। শিলাদিত্যের মন্তব্য নিয়ে পাল্টা কিছু না বললেও প্রথম আলোর কাছে তিনি দাবি করেন, ‘বাঙালি বাঙালিই। হিন্দু ও মুসলিম বাঙালি বলে কিছু হয় না। আর এই পরিচয় মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে ভারতে।’

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্যের মতে, ‘বাঙালি কোনো অবস্থাতেই নিজেদের পরিচয় বিসর্জন দিতে পারে না। আসামে বাঙালি ‘বাঙালি’ পরিচয়েই বসবাস করতে চায়।’