আশঙ্কায় পাত্তা দিচ্ছেন না মে

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সংসদীয় লিয়াজোঁ কমিটির মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: হাউস অব কমন্স
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সংসদীয় লিয়াজোঁ কমিটির মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: হাউস অব কমন্স

সরকারের অর্থ বিভাগ বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) যুক্তরাজ্যকে তুলনামূলক গরিব করবে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলছে, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট হলে অর্থনৈতিক মহামন্দায় পতিত হবে দেশ। আর দেশের নিরাপত্তা–বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেন ওয়ালেস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চুক্তিহীন বিচ্ছেদ যুক্তরাজ্যে চরম নিরাপত্তার সংকট তৈরি করবে।

নানামুখী এমন আশঙ্কার কিছুই পাত্তা দিচ্ছেন না দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি বলছেন, সংসদে বিচ্ছেদ চুক্তি পাস করিয়ে নেওয়াতেই এখন তাঁর সব মনোযোগ। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালে সংসদীয় লিয়াজোঁ কমিটির মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী মে। বিভিন্ন দলের জ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী এমপিরা ব্রেক্সিট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি প্রশ্ন করেন। বিভিন্ন দপ্তর থেকে উত্থাপিত আশঙ্কার বিষয়গুলো নিয়েও তাঁকে জেরা করা হয়।

গতকাল বুধবার প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের অর্থ বিভাগের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচ্ছেদ চুক্তি যেমনই হোক না কেন; ইইউ থেকে বেরিয়ে এলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ১৫ বছরে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থের অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ১০০ বিলিয়ন পাউন্ড। এ বিষয়ে এমপিদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই গবেষণায় বলা হয়নি যে অর্থনীতি বর্তমান অবস্থার চেয়ে খারাপ হবে। বলা হয়েছে ইইউর সঙ্গে না থাকলে জিডিপি ওই পরিমাণ কম হতে পারে। কিন্তু গণভোটে বিচ্ছেদের পক্ষে রায় যাওয়ার পর ইইউর সঙ্গে থাকা কোনো বিকল্প হতে পারে না।

সরকারি ওই প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মাথায় গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) গভর্নর মার্ক কারনি। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট হলে যুক্তরাজ্যে ঘরবাড়ির দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যেতে পারে। জিডিপির পতন হতে পারে ৮ শতাংশ। এতে দেশে অর্থনৈতিক মহামন্দা (রিসেশন) নেমে আসবে।

এরপর আজ নিরাপত্তা–বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ যুক্তরাজ্যে নিরাপত্তার সংকট তৈরি করবে। কেননা ইইউর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদ দমন ও অপরাধীদের বিতাড়নসহ নানা বিষয় যুক্ত।

এসব আশঙ্কার বিষয়ে থেরেসা মে বলেন, চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের কথা তিনি এখন ভাবছেন না। সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তি সংসদে পাস করিয়ে নেওয়ার দিকেই এখন তাঁর সব মনোযোগ। এই চুক্তিতে ইইউর সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, এতে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনভাবে বাণিজ্য চুক্তি করার অধিকারও পাবে যুক্তরাজ্য।

তবে লেবার দলের এমপি র‌্যাচেল রিভসের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, সাংসদেরা যদি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন, তখন অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দীর্ঘ ১৮ মাসের চেষ্টার পর বিচ্ছেদ কার্যকরে একটি চুক্তিতে সম্মত হয় যুক্তরাজ্য ও ইইউ। কিন্তু যুক্তরাজ্যে বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সরকারি দলের অনেক এমপি এই চুক্তির বিরোধিতা করছেন। চুক্তির সমর্থনে জনমত গড়তে প্রধানমন্ত্রী মে পুরো দেশ সফরে নেমেছেন। বারবার গণমাধ্যমে হাজির হয়ে চুক্তির পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরছেন।

৪, ৫, ৬, ১০ ও ১১ ডিসেম্বর—এই পাঁচ দিন চুক্তি নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। বিতর্কের জন্য প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ১১ ডিসেম্বর সর্বশেষ বিতর্কের পর চুক্তি গ্রহণ বা বর্জন প্রশ্নে এমপিদের ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।