বিজেপির রথযাত্রার আবেদন কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ

বিজেপির রথযাত্রার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। ছবি: সংগৃহীত
বিজেপির রথযাত্রার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে নিরাপত্তার দাবিতে এবং রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার প্রতিবাদে গত শুক্রবার ভারতের কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেছিলেন রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে দায়ের করা ওই মামলার আজ শুনানি হয়েছে। বিজেপির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি।

এর আগে আদালত রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রতিবেদন তলব করেন। রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশ তাদের প্রতিবেদনে আদালতকে জানিয়ে দেয়, এই অল্প সময়ে প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি নিরাপত্তার স্বার্থে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে বিজেপির আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, এ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৯ জানুয়ারি। শুনানির আগে এই রাজ্যে রথযাত্রা করা যাবে না। আগামীকাল শুক্রবার কোচবিহার থেকে প্রথম রথ বের হওয়ার কথা। যদিও এই রায় ঘোষণার পর বিজেপি বলেছে, আজই তারা এই একক বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করবে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। এরপরে তারা প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেও যাবে।

বাবরি মসজিদ ধংসের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় সংহতি মিছিল বের করে বাম দল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বাবরি মসজিদ ধংসের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় সংহতি মিছিল বের করে বাম দল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

গত ৩০ নভেম্বর বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে নিরাপত্তার দাবিতে দায়ের করা মামলার পর এই রথযাত্রাকে কটাক্ষ করে পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী এবং কলকাতা করপোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে চামচিকেও পাখি, আর বিজেপিও একটি পার্টি।’

এদিকে এই রথযাত্রাকে নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। আর এর পাল্টা হিসেবে আগামীকালই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলাজুড়ে তৃণমূল আয়োজন করেছে এক সংকীর্তন যাত্রার।

আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তাই রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী ঝড় তোলার জন্য বিজেপি এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ নামে তিনটি প্রচাররথ বের করার। রথ তিনটি বের হবে রাজ্যর তিন প্রান্ত থেকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘এ তো রথ নয়, যেন পাঁচতারা হোটেল।’ এসি থেকে ইন্টারনেট—সব ব্যবস্থাই থাকবে রথগুলোয়। থাকবে নেতাদের বিশ্রাম কক্ষ ও খানাপিনার ব্যবস্থা।

এই রথ বের হওয়ার কথা ছিল আগামীকাল ৭, ৯ ও ১৪ ডিসেম্বর। বিজেপি বলেছিল, এই রথযাত্রাকে ঘিরে তিনটি বড় সমাবেশ করা হবে। এই তিন সমাবেশেই উপস্থিত থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। সঙ্গে থাকবেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। থাকবেন বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। অবশ্য আগামী ১৯ জানুয়ারি মমতাও ডাক দিয়েছেন মোদিবিরোধী মহাসমাবেশের। সেই সমাবেশ হবে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। সেখানে উপস্থিত থাকবে বিজেপিবিরোধী সব রাজনৈতিক দল।

তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য আগেই রথযাত্রার পাল্টা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে যে তারাও তারাপীঠে রথযাত্রার সময় বীরভূম জেলাজুড়ে বের করবে খোল-করতাল নিয়ে সংকীর্তন যাত্রা। তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আগেই ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, এই সংকীর্তন যাত্রায় ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ৪ হাজার খোল ও ৮ হাজার করতাল। এগুলো বানিয়ে আনা হয়েছে নবদ্বীপ ও মুর্শিদাবাদ থেকে। এ জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি রুপি। গতকাল বুধবার সেই খোল–করতাল ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করেছেন অনুব্রত মণ্ডল।

অনুব্রত বলেছিলেন, বিজেপির ওই রথযাত্রা হবে ‘শ্মশান যাত্রা’, দলের ‘অন্তিম যাত্রা’। অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা বলেছিলেন, ‘খোল করতাল তো শবযাত্রায় লাগে। তৃণমূলের দিন শেষ। তাই শবযাত্রার জন্য খোল করতাল এনেছে।’

বিজেপির সভাপতির বহরে হামলা

এদিকে এই রথযাত্রার সূচনা করতে আজ বৃহস্পতিবার কোচবিহারে যান পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখানে তিনি কালকের রথযাত্রার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে কোচবিহার থেকে নিকটবর্তী একটি ধর্মসভায় যোগ দিতে গেলে কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা থানার সিতাই মোড়ে আক্রান্ত হন। এ সময় দিলীপ ঘোষের কনভয়ের সাতটি গাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী। এই হামলায় দিলীপ ঘোষ সামান্য আহত হন। এদিকে দিলীপ ঘোষের কনভয়ের ওপর হামলার খবর শোনার পর বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা আজ বিকেলে কলকাতার রাজ্য বিজেপি অফিসের সামনের সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ সড়ক অবরোধ করেন।

বাবরি মসজিদ ধংসের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় সম্প্রীতির মিছিল বের করে তৃণমূল কংগ্রেস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বাবরি মসজিদ ধংসের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় সম্প্রীতির মিছিল বের করে তৃণমূল কংগ্রেস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সম্প্রীতির মিছিল পশ্চিমবঙ্গে
আজ ছিল বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন। এদিন সামনে রেখে প্রতিবারের মতো কলকাতায় সম্প্রীতির মিছিলে বের করে বাম দল ও তৃণমূল। বাম দল দিনটি পালন করে সংহতি দিবস হিসেবে। মিছিল বের হয় মহাজাতি সদন থেকে। শেষ হয় পার্ক সার্কাসে। তৃণমূল মিছিল শেষে সমাবেশ করে কলকাতার মেয়ো রোডে। দুটি সমাবেশেই বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।