বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়। তারা নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে তারা আন্দোলন জোরদার করেছে। তারা বলেছে, এই ছিন্নমূল নাগরিকদের এখানে বসবাসে নাগরিকত্ব দিতে হবে।

মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নে মমতা গড়েছেন মতুয়া উন্নয়ন পরিষদ। মতুয়াগুরুর নামে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যায় গড়ারও ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি মতুয়া সম্প্রদায়ের ঠাকুরনগরের প্রধান আশ্রমে গিয়ে মতুয়াগুরুমাতা বীণাপাণি দেবীর আশীর্বাদ নিয়েছেন।

মতুয়া সম্প্রদায়ের পর এবার মাঠে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গের নমশূদ্র সম্প্রদায়। তাদের গড়া সর্বভারতীয় নমশূদ্র বিকাশ পরিষদও এবার রাজনীতির মাঠে নেমে দাবি তুলেছে, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে এপারে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এই দাবি থেকে তারা পিছপা হবে না। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে সব উদ্বাস্তুকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। মোদি প্রধানমন্ত্রী হলেন, অথচ তাঁর শাসনের চার বছরেও দেওয়া হয়নি নাগরিকত্ব। আগামী মার্চ-এপ্রিলে লোকসভা নির্বাচন। তাই নমশূদ্র বিকাশ পরিষদ এই নাগরিকত্বের দাবিতে জোরদার করেছে তাদের আন্দোলন।

গত রোববার এই দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঠাকুরনগরের ফুলবাজার ফুটবল মাঠে আয়োজন করা হয় এক মহাসমাবেশের। সেখানেই নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দেশভাগের জন্য রাষ্ট্রনেতারা দায়ী। বলা হয়, কেন্দ্রীয় মোদি সরকার উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আন্তরিক নয়; শুরু করেছে টালবাহানা।

নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক যুগল কিশোর সরকার বলেছেন, ওপার বাংলা থেকে আসা সব হিন্দু উদ্বাস্তুকে নাগরিকত্ব দিতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া না হলে তারা বিপন্ন হবে। সংগঠনের সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি মুকুল চন্দ্র বৈরাগী বলেছেন, ‘আমাদের পরামর্শ নিয়ে দেশভাগ হয়নি। দেশভাগের বলি হয়ে যাঁরা ওপার থেকে এপার এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। দিতে হবে নাগরিকত্ব। তাই নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য কোনো শর্ত মানা হবে না। নাগরিকত্ব দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তারা পালন করছে না। আমাদের দাবি, অবিলম্বে ওপার থেকে আসা সব হিন্দু উদ্বাস্তুকে নাগরিকত্ব দিতে হবে।’

বক্তারা মতুয়া ও নমশূদ্রদের উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উন্নয়ন পরিষদ গঠন করেছেন, এ বিষয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আসামের এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন নিয়ে বিজেপি সরকারের বাঙালি বিতাড়নের উদ্যোগের বিরুদ্ধে মমতা যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছেন, আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, সেই আন্দোলনের সঙ্গে নমশূদ্র বিকাশ পরিষদ একাত্মতা ঘোষণা করছে। পাশাপাশি দাবি তুলেছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় বিজয়ী নমশূদ্র বিধায়কদের মধ্য থেকে কাউকে মন্ত্রী করা হোক।