হুয়াওয়ের কর্মকর্তার জামিন, আড়ালে কী?

হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝু। ছবি: এএফপি।
হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝু। ছবি: এএফপি।

গ্রেপ্তারের ১০ দিন পর চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুকে জামিন দিয়েছেন কানাডার আদালত। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে ১ ডিসেম্বর ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কানাডার কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার থেকে মেং ওয়ানঝুর জামিন শুনানি শুরু হয়। তাঁকে গ্রেপ্তারে ক্ষুব্ধ হয়ে কানাডাকে কড়া বার্তা দিয়েছিল চীন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মেংকে গ্রেপ্তার নিয়ে চীন ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যখন একটি টানাপোড়েনের সম্পর্ক চলছে, ঠিক তখনই গ্রেপ্তার হন মেং ওয়ানঝু। তিনি হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই মেয়ে। তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানে প্রযুক্তি বিক্রি করার অভিযোগ করা হয়। তিনি হংকং থেকে মেক্সিকো যাচ্ছিলেন। ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে তাঁর যাত্রাবিরতি ছিল।

এই গ্রেপ্তারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করে মেং ওয়ানঝুর মুক্তি চায় বেইজিং। দোষী সাব্যস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

আদালতে শুনানি শেষে বিচারক উইলিয়াম আকি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলারে তাঁর শর্ত সাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন দেওয়ার পর আদালত কক্ষে সবাই হাততালি দেন এবং মেং আনন্দে আইনজীবীকে জড়িয়ে ধরেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানি হবে।

জামিনের শর্ত অনুযায়ী, ৪৬ বছর বয়সী মেং ওয়ানঝুকে পায়ে একটি নজরদারি যন্ত্র (মনিটর) পরে থাকতে হবে এবং রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তিনি বাইরে যেতে পারবেন না। এর বাইরে পাঁচ বন্ধুর কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়েছে।

কানাডার আদালত যদি মেং ওয়ানঝুর বিপক্ষে রায় দেন, তবে কানাডার আইনমন্ত্রী তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে প্রত্যর্পণ করবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্র তখন একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতারণার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত সাজা দিতে পারবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বা চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি বন্ধের কোনো বিষয় যদি থাকে, তবে মেংয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের মামলায় তিনি হস্তক্ষেপ করবেন।

এর আগে হুয়াওয়ের ওই নির্বাহীকে দ্রুত ছেড়ে দিতে কানাডার প্রতি চীন আহ্বান জানিয়েছিল চীন। একই সঙ্গে বেইজিং হুঁশিয়ারি করে বলে, মেং ওয়ানঝুকে না ছাড়লে তার ভয়ানক পরিণতির সব দায় কানাডাকে ভোগ করতে হবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তারের পর পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে বেইজিং।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর দেশটির নাগরিকদের চীন ভ্রমণে সতর্ক করেছে। কানাডাও একই রকম সতর্ক ব্যবস্থা নিতে পারে বলে কানাডার সিটিভি নেটওয়ার্ক উল্লেখ করেছে।

গতকাল সকালে কানাডার সরকার বলেছে, তাদের একজন নাগরিককে আটক করেছে চীন।

দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, কানাডার সাবেক কূটনীতিক মাইকেল কভরিগকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বেইজিং। কানাডার সরকার বলেছে, এ ঘটনার সঙ্গে হুয়াওয়ের মামলার সম্পর্ক নেই।

তবে চীনে নিযুক্ত কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত গাই সেইন্ট-জ্যাকস বলেন, ‘এটা কাকতাল কিছু নয়। চীনে কাকতাল বলে কিছু নেই। আপনারা যদি তাদের কোনো বার্তা দিতে চান, তারাও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।’

এ ঘটনায় চীনা দূতাবাস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুর গ্রেপ্তারে কানাডা সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত শুক্রবার কানাডার একটি আদালতে তাঁর জামিন শুনানির সময় এক আইনজীবী তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, জামিন দিলে মেং ওয়ানঝু পালিয়ে যেতে পারেন।

মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুকে আটক করেছে কানাডা। বিষয়টি পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা ও বেইজিংয়ের মধ্যে প্রযুক্তিগত স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিষয়টি হুয়াওয়ের জন্য আকস্মিক বিপত্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা অমান্য করে হুয়াওয়ে তাদের কাছে টেলিকম যন্ত্রপাতি বিক্রি করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহ করছে।

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারে, তবে হুয়াওয়ের জন্য বিপদ হতে পারে। বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে জায়গা হারাতে পারে হুয়াওয়ে।