নিজ দলে অনাস্থা ভোটের মুখে থেরেসা মে

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন তাঁর দলের আইনপ্রণেতারা (এমপি)। ফলে তিনি অনাস্থা ভোটের মুখে পড়েছেন। আজ বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আটটা (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা থেকে ৪টা) পর্যন্ত এই ভোটাভুটির সময় নির্ধারিত আছে।

অনাস্থা ভোটে হারলে কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেও বিদায় নিতে হবে থেরেসা মেকে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট নামে পরিচিত) অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা।

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে চলমান বিরোধের জের ধরে রাজনৈতিক জীবনের কঠিনতম মুহূর্তে উপনীত হলেন প্রধানমন্ত্রী মে। তবে নিজের সবটুকু দিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

থেরেসা মের সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে বিরোধী দলগুলো সন্তুষ্ট নয়। তাঁর নিজ দল কনজারভেটিভের অনেক এমপি এর বিরোধী। নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) ওপর ভর করে সরকারে আছেন থেরেসা মে। সেই ডিইউপিও এই চুক্তির ঘোরবিরোধী। যে কারণে গত সোমবার এই চুক্তি অনুমোদন প্রশ্নে পার্লামেন্টে নির্ধারিত ভোট পিছিয়ে দিতে বাধ্য হন মে। চুক্তিটি এমপিদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মঙ্গলবার পুনরায় ছুটে যান ইইউর দরবারে। তবে ইইউ নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, যা সমঝোতা হয়েছে তার বাইরে নতুন কিছু মিলবে না।

এমন পরিস্থিতে সরকারের প্রতি অনাস্থা আনা বিরোধী দলগুলোর জন্য অনেকটা সহজ ছিল। বিভিন্ন তরফ থেকে এমন প্রস্তাবও ছিল বেশ জোরালো। তবে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রী মের চেষ্টার শেষ দেখে অনাস্থা ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই নিজ দল থেকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করা হলো।

কনজারভেটিভ দলের নিয়ম অনুযায়ী, দলের ১৫ শতাংশ এমপি আবেদন জানালেই অনাস্থা ভোটের মুখে পড়ে নেতৃত্ব। সে অনুযায়ী দলটির ৪৮ জন এমপির আবেদনের প্রয়োজন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নমনীয় ব্রেক্সিট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কোনো কোনো এমপি বেশ আগ থেকেই অনাস্থা জানিয়ে ‘১৯২২ কমিটি’-তে (পেছনের সারির এমপিদের কমিটি যা নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের বিষয়টি দেখভাল করে) চিঠি দিতে শুরু করেন। ধারণা করা হচ্ছিল, বিদ্যমান বাস্তবতায় এ সংখ্যা হয়তো ৪৮-এ পৌঁছাবে না।

কিন্তু মঙ্গলবার রাতে কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্রাডি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান যে ৪৮ জন এমপির আবেদন তিনি পেয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি অনাস্থা ভোটের আয়োজন করছেন। তখন প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এ বিষয়ে সুরাহা দেখতে চান বলে জানান। আজ বুধবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে হাজির হন মে। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে নিজের চেষ্টা ও নেতৃত্বের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। মে বলেন, ‘আমার সবটুকু দিয়ে এই ভোট মোকাবিলা করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতৃত্বের পরিবর্তন ব্রেক্সিট চুক্তিতে নতুন কিছু যোগ করবে না। সংসদে দলগুলোর যে অবস্থান সেই হিসাবেরও কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না। তিনি বলেন, আগামী বছরের ২৯ মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকরের সীমা নির্ধারিত আছে, তা নতুন নেতৃত্বের পক্ষে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ফলে ব্রেক্সিটের সময়সীমা পিছিয়ে দিতে হবে অথবা ব্রেক্সিটের চিন্তাই বাদ দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে আপত্তি নিরসনে তিনি মঙ্গলবার ইইউ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আজ তাঁর আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকারের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠক বাতিল করে তাঁকে নেতৃত্ব রক্ষায় মনোযোগ দিতে হচ্ছে। এ সময়ে নেতৃত্বের বদল বিরোধী দলকে ক্ষমতায় আসার পথ খুলে দেবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। নির্ধারিত সময়ে ব্রেক্সিট কার্যকরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গোপন ব্যালটে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি অনাস্থার পক্ষে সায় দিলেই বাদ পড়বেন মে। ভোটাভুটির ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফলাফল ঘোষিত হওয়ার কথা। রীতি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অনাস্থা ভোটে হেরে গেলে নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন মে।

সাধারণত ছয় সপ্তাহের মধ্যে নতুন নেতা নির্বাচন করতে হয়। এমপিরা আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্য থেকে ভোটাভুটি করে দুজনকে চূড়ান্ত করেন। ওই দুজন দলের সদস্যদের সামনে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে বিতর্কে অংশ নেন। এরপর সাধারণ সদস্যদের ভোটাভুটিতে চূড়ান্ত হয় নেতা।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজের মানুষ ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দেন। পরাজয় মেনে নিয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন থেরেসা মে। থেরেসা মেকে টিকিয়ে রাখতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বিরোধী দলগুলো বলছে, ক্ষমতাসীনরা দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে নিজেদের বিবাদকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এক মজার রীতি চোখে পড়ল। তাঁর বক্তব্যের জন্য রাখা পোডিয়ামে সরকারি লোগো ছিল না, যা ইঙ্গিত করে তিনি নিজের ব্যক্তিগত কিংবা দলের বিষয়ে কথা বলছেন।