'জঙ্গি কাওসারের' জেরা চলছে

ভারতের কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স বা এসটিএফ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় ও বিহারের বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণ–কাণ্ডের মূল হোতা কাওসার ওরফে বোমা মিজানকে গত আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার করেছে। গত মঙ্গলবার কলকাতার বিশেষ আদালত কাওসারকে ফের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত দিয়েছেন। এসটিএফ এখন কাওসারকে জেরা করে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি দল জেএমবির ঘাঁটি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছে।

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর রামনগর এলাকা থেকে কাওসারকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাওসারকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এনআইএ ১০ লাখ রুপি পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিল। ৩৮ বছর বয়সী এই কাওসার ছিলেন খাগড়াগড় ও বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণ ঘটনার মূল হোতা ও জেএমবির শীর্ষ নেতা। ভারতে জেএমবি এখন নাম বদল করে রেখেছে জেএমআই বা জামাতুল মুজাহেদিন অব ইন্ডিয়া। এসটিএফ এখন কাওসারকে জেরা করে জেএমআইর ভারতের প্রধান সালাউদ্দিন সালেহীনের খোঁজ পেতে চাইছে।

কাওসারকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে জেএমবি বা জেএমআই এখনো তৎপর রয়েছে ভারতে। তারা এখন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূম ও পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে তিনটি ঘাঁটি তৈরি করেছে। পুলিশ এখন এসব ঘাঁটির খোঁজখবর নিতে কাওসারকে জেরা করছে।

এসটিএফ সূত্র উদ্ধৃত করে ভারতের সংবাদমাধ্যমের খবরে আজ শুক্রবার বলা হয়েছে, কাওসার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেন। কিন্তু বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের পর কাওসার কর্ণাটকে পালিয়ে যান। সেখানেই কাওসার জেএমবির ঘাঁটি গড়ে তোলেন। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কাওসার স্বীকার করেছেন বেঙ্গালুরু থেকে তাঁরা জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়েছে। তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানোর লক্ষ্য ছিল।

কাওসার এ কথাও স্বীকার করেছেন, তাঁরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার এবং হত্যার বদলা নেওয়ার জন্য ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণের ছক কষছিলেন। এই লক্ষ্যে তাঁরা তাঁদের দলে যুবকদের নেওয়া শুরু করেন।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরের কাছে খাগড়াগড়ের একটি ভাড়াবাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণে দুজন জেএমবি জঙ্গি নিহত হয়। এরপরই জানা যায়, বাড়িটি জেএমবির ঘাঁটি ছিল। সেখানেই গ্রেনেড আর বোমা তৈরি হতো। পরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। সেদিনের বিস্ফোরণে আহত হয় তিনজন। সেদিন প্রাথমিক তদন্ত শেষে পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করে, নিহত দুই জঙ্গি বাংলাদেশের জেএমবির সদস্য। তাঁরা এখানে আত্মগোপন করে অস্ত্র তৈরির কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এখান থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠাতেন। সেদিন বিস্ফোরণে তিনজন জখম হলেও একজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। তাঁর নাম আবদুল হাকিম। তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

নিহত দুই জঙ্গির নাম শাকিল আহমেদ ও সুবহান মণ্ডল। দুজনের বাড়ি বাংলাদেশে বলে পুলিশ দাবি করেছিল। এ ঘটনায় নিহত শাকিল ও আহত আবদুল হাকিমের স্ত্রী যথাক্রমে রাজিয়া বিবি এবং আলিমা বিবিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশ গ্রেপ্তার করে সেদিন হাসেম মোল্লা ও আহত জঙ্গি আবদুল হাকিমকেও। সেদিন পুলিশ কাওসার ওরফে বোমা মিজানকে ধরতে পারেনি। বিস্ফোরণের পর কাওসার এবং অন্যরা বর্ধমান থেকে পালিয়ে যান।