'রাফাল মামলা' খারিজে সরকারে স্বস্তি

‘রাফাল মামলা’ খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: রয়টার্স
‘রাফাল মামলা’ খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: রয়টার্স

রাফাল যুদ্ধবিমানসংক্রান্ত মামলা খারিজ হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা খারিজ করে দিয়ে জানান, যুদ্ধবিমান কেনাবেচা নিয়ে তদন্তের কোনো প্রয়োজন নেই। সর্বোচ্চ আদালত এ কথাও জানান, অফসেট চুক্তিতে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অতএব আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।

ফ্রান্স থেকে এই যুদ্ধবিমান কেনা–বেচা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা হয়েছিল। মামলাকারীরা চেয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিন। সর্বোচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআইকে সেই তদন্ত করতে বলা হোক। কিন্তু সেই দাবি খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি রঞ্জন কল ও বিচারপতি এম কে জোসেফের বেঞ্চ। রায়ে বলা হয়, যুদ্ধবিমান কেনার প্রযুক্তিগত ও পদ্ধতিগত বিষয়ে আদালত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

কংগ্রেস আমলে ৭৯ হাজার কোটি রুপিতে ১২৬টি রাফাল কেনা–বেচা নিয়ে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে আলোচনা চলছিল। ঠিক হয়েছিল, ১৮টি পুরোপুরি তৈরি বিমান সরাসরি ভারতে পাঠানো হবে, বাকি বিমানগুলো প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে তৈরি করা হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডে (হ্যাল)। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ফ্রান্স সফরে গিয়ে জানান, ৫৯ হাজার কোটি রুপিতে ৩৬টি পুরোপুরি তৈরি বিমান কেনা হবে। যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করা হবে অনিল আম্বানির বেসরকারি সংস্থায়। এই ‘অফসেট চুক্তির’ পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি রুপি। অভিযোগ, বেশি দামে কম বিমান কেনা হচ্ছে। বিমান কেনার পদ্ধতিগত বিষয় মানা হয়নি এবং সরকারি সংস্থার বদলে বেসরকারি সংস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট জানান, কত যুদ্ধবিমান লাগবে, তার গুণগত মান কেমন, প্রযুক্তিগত বিষয় কী—এসব আদালতের বিচার্য নয়। কাউকে অন্যায় সুবিধাও পাইয়ে দেওয়া হয়নি। ফলে আদালতের হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।

তিন রাজ্যে ভোটে হারার পর বিমর্ষ বিজেপি সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে চনমনে হয়ে উঠেছে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ টুইট করে বলেছেন, সর্বদা সত্যের জয় হয়। সংসদও উত্তাল হয়ে ওঠে রাফাল নিয়ে। শাসক দলের সদস্যরা দাবি করেন, অসত্য প্রচারের জন্য রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। অমিত শাহর অভিযোগ, ভোটে সাময়িক লাভ পেতে রাহুল দেশবাসীকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, এত বড় মিথ্যাচার স্বাধীনতার পরে কখনো হয়নি। চৌকিদার যে চোর, সে কথা দেশবাসী কোনো দিন মেনে নেবে না।

তবে এই রায়ে হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অন্যতম মামলাকারী আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই রায় অন্যায্য। যুদ্ধবিমানের গুণগত মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, সেগুলোর জবাব পাওয়া গেল না। কোনো চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে আদালতের উচিত তা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া। সুপ্রিম কোর্ট সেই দিকটিই উপেক্ষা করলেন।

অনিল আম্বানির রিলায়েন্স সংস্থাকে ‘অফসেট পার্টনার’ ঠিক করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দাসো এভিয়েশন। তাই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। প্রশান্ত ভূষণ বলেন, চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অফসেট পার্টনার ঠিক করা যাবে না। কিন্তু দাসো এভিয়েশন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার সিল করা খামে তাদের বক্তব্য জানিয়েছে। তা দেখেছেন একমাত্র বিচারপতিরাই। কাজেই সরকার কী তথ্য দিয়েছে আর বিচারপতিরা কী দেখেছেন, তা তাঁরাই জানেন।