পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রার অনুমতি না পেয়ে আদালতে বিজেপি

পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রার অনুমতি না পেয়ে আবার আদালতের গেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার গত শনিবার রাজ্য বিজেপিকে জানিয়ে দিয়েছিল, বিজেপির ৪২ দিনের রথযাত্রার অনুমতি দিতে পারছে না। আর রাজ্য সরকারের এই আদেশের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার আবার কলকাতা হাইকোর্টে গেছে বিজেপি। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর একক বেঞ্চ বিজেপির আবেদন গ্রহণ করেছেন। আজ মঙ্গলবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা।

শনিবার বিকেলে রাজ্য সচিবালয় নবান্ন থেকে এক ফ্যাক্স বার্তায় বিজেপিকে রথযাত্রার অনুমতি না দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন বিজেপি জানায়, তারা এই রথযাত্রার অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবে। রাজ্য সচিবালয়ের নির্দেশে বলা হয়, রাজ্য সরকার রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে এই রথযাত্রার অনুমতি না দিলেও প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভা করতে অনুমতি দিতে পারে।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর রথযাত্রার নাম বদলে বিজেপি এর নাম দেয় ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’। এতেও কাজ হয়নি। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, ৪২ দিন ধরে এই কর্মসূচি চালাতে দেওয়া যায় না। রথযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাঁচ হাজার পুলিশ নিয়োগ করতে হবে। তা এখন কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। রয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা, পৌষমেলা, বড়দিনের উৎসব এবং খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্‌যাপন। রাজ্য সরকারের আশঙ্কা, এসব উৎসব ঘিরে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। রাজ্য সরকার মনে করে, রথযাত্রা নিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। এ কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে রথযাত্রার অনুমতি দেয়নি। তবে মোদি ও অমিত শাহ সভা করলে তার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

রথযাত্রার নিরাপত্তার দাবিতে এবং রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার প্রশ্ন তুলে গত ৩০ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেছিলেন রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর একক বেঞ্চে ওই আবেদনের শুনানি শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। আদেশে বলা হয়, আগামী ৯ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রা করা যাবে না। এই আদেশের ফলে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় বিজেপির রথযাত্রার কর্মসূচি।

একক বেঞ্চের আদেশের বিরুদ্ধে বিজেপি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। সেই আবেদনের শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমদ্দারের নেতৃত্বে গড়া ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের দেওয়া নির্দেশকে খারিজ করে দেন। বলা হয়, একক বেঞ্চের রায়ের গ্রহণযোগ্যতা নেই। একটি আবেদনের ওপর যেকোনো ধরনের নির্দেশ দিতে পারেন আদালত, কিন্তু একটি আবেদনকে সরাসরি খারিজ করে দিতে পারেন না। ডিভিশন বেঞ্চ জানান, এই রথযাত্রা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পুলিশের ডিজিকে বসতে হবে বিজেপির তিন প্রতিনিধির সঙ্গে তিন দিনের মধ্যে। সেখানেই ঠিক করতে হবে কীভাবে এই রথযাত্রার কর্মসূচি পালন করা যায়। সেই প্রতিবেদন রাজ্য সরকারকে দিতে হবে আগামী শুক্রবারের মধ্যে। এই নির্দেশের ফলে কার্যত আর বাতিল করা হয়নি রথযাত্রা। গত বৃহস্পতিবার কলকাতার লালবাজারের পুলিশ হেডকোয়ার্টারে রাজ্য সরকারের ওই তিন প্রতিনিধি বৈঠক করেন বিজেপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এরপর শনিবার রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, তারা রথযাত্রার অনুমতি দিতে পারছে না।

আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তাই রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী ঝড় তোলার জন্য বিজেপি এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ নামে তিনটি প্রচার রথ বের করার। রথ তিনটি বের হবে রাজ্যর তিন প্রান্ত থেকে।

রথ বের হওয়ার কথা ছিল ৭, ৯ ও ১৪ ডিসেম্বর। রথ কোচবিহার থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল ৭ ডিসেম্বর। এরপর দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল ৯ ডিসেম্বর। আর বীরভূমের তারাপীঠ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৪ ডিসেম্বর।

রথযাত্রাকে ঘিরে তিনটি বড় সমাবেশ কর্মসূচি ছিল বিজেপির। বলা হয়েছিল, সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। এই রথযাত্রার মাঝেই প্রথম সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল ১৬ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে। দ্বিতীয় সমাবেশ ২৪ ডিসেম্বর বর্ধমানের দুর্গাপুরে, তৃতীয় সমাবেশ ১১ জানুয়ারি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে এবং চতুর্থ বা শেষ মহাসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে ২৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে।