সর্বানন্দের মুখ ও মুখোশ চেনার উপায় নেই
আসামের বাঙালিদের দুর্ভোগ সহজে কমছে না। নাগরিকত্ব নিয়ে তাঁদের সমস্যা মিটছেই না। এমনকি জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়ায় নাম থাকলেও নিস্তার নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকেই দায়ী করছেন বিরোধীরা।
গতকাল মঙ্গলবার ভারত সরকার জাতীয় সংসদকে জানিয়েছে, এনআরসি আপাতত শুধু আসামেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদকে এই বিষয়ে অবহিত করেন ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহির।
কিন্তু তারপরও ভারতীয় বাঙালিদের নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যা কমার কোনো লক্ষণ নেই। কারণ, একই দিন আগরতলায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানালেন, চূড়ান্ত খসড়ায় নাম থাকলেও ফের যাচাই হবে অন্তত ২০ শতাংশের নাম।
আসামের এনআরসি তালিকায় নাম তোলার জন্য মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪ জন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু গত ৩০ জুলাই চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হলে দেখা যায়, ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জনেরই নাম নেই। নাম বাদ পড়াদের বেশির ভাগই বাঙালি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আসামে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলছে নাম সংযোজন ও আপত্তি জানানোর আবেদনপ্রক্রিয়া।
এরই মধ্যে গতকাল আগরতলায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন থেকে জানতে পেরেছি, বহু বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর নাম রয়েছে খসড়া তালিকায়। তাই অন্তত ২০ শতাংশ নামের তথ্যাদি পুনরায় যাচাই করা হবে।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কড়া নিন্দা করেছে কংগ্রেস। আসাম থেকে নির্বাচিত বাঙালি সাংসদ, তথা সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বানন্দ চিরকালই বাঙালিবিদ্বেষী। আগে আসাম গণপরিষদের নেতা ছিলেন। এখনো ভুলতে পারেননি বাঙালিবিদ্বেষ।’
বিজেপি–শাসিত আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে মন্তব্য করেছেন আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতির (সিআরপিসিসি) চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য। আসাম থেকে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাদের (বিজেপির) দিন শেষ হয়ে এসেছে। তাই এই সব কথাবার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই।’
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক উপাচার্যের অভিযোগ, সর্বানন্দ বাঙালি–অধ্যুষিত এলাকায় একরকম কথা বলেন। আবার অসমিয়া–অধ্যুষিত এলাকায় অন্য ধরনের কথা বলেন। তাঁর কোনটি যে মুখ, আর কোনটি মুখোশ, সেটা বোঝার উপায় নেই।’