আসামে বিপদে বিজেপি, তিন মন্ত্রীর ইস্তফা

নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আসামের ইতিহ্যবাহী কটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জনের ডাক দেয়। ছবি: ইনসাইডএনইয়ের সৌজন্যে
নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আসামের ইতিহ্যবাহী কটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জনের ডাক দেয়। ছবি: ইনসাইডএনইয়ের সৌজন্যে

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে আসামে বিজেপির জোট শরিক অসম গণ পরিষদ (অগপ) রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে আজ বুধবার আনুষ্ঠানিক ইস্তফা দিল। আজ রাজ্যপাল জগদীশ মুখীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন অগপর তিন মন্ত্রী অতুল বরা, কেশব মহন্ত ও ফণীভূষণ চক্রবর্তী।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ নেই। ভারতের জাতীয় সংসদের লোকসভায় গতকাল মঙ্গলবার বিলটি পাশ হলেও রাজ্যসভায় পাশ হয়নি।

বিজেপি সূত্রের খবর, সামনের মাসে বাজেট অধিবেশনে বিলটি পেশ করতে পারে বিজেপি। রাজ্যসভায় অবশ্য বিল পাশের সম্ভাবনা খুব কম। কেননা বিজেপির প্রয়োজনীয় সমর্থন নেই রাজ্যসভায়।

এদিকে, অগপ নেতা ও আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লকুমার মহন্ত মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে ইস্তফার পরামর্শ দেন। সর্বানন্দও এক সময়ে অগপ দলে ছিলেন। মহন্ত আজ মন্তব্য করেন, বিজেপির উচিত নতুন করে জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় বসা। কারণ হিসাবে তিনি অগপর সঙ্গে জোট করেই অসমে বিজেপির জয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
এদিন বিজেপির অএপর শরিক দল বিপিএফয়ের নেত্রী ও রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রমীলা রাণী ব্রক্ষ্মও নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বিপিএফ।
শুধু শরিক দলই নয়, বিজেপির মধ্যেও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ। ইতিমধ্যেই বিজেপির মুখপাত্র মেহেদি আলম বরা ইস্তফা দিয়েছেন।
আসামে এদিনও দফায় দফায় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের ছাবুয়ার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা। শিবসাগর জেলায় বিজেপি পার্টি অফিস লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীরা পচা ডিম ছুড়ে মারেন।
বহু জায়গাতেই আধাসেনা ও পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষের পাশাপাশি গাড়ি, বাড়ি ভাঙচুড়ের খবর পাওয়া যায়। আসামের ঐতিহ্যশালী কটন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে শুরু হয়েছে ক্লাশ বয়কট।

তবে বিক্ষোভের মুখে আন্দোলনকারীদের কড়া হাতে মোকাবিলা করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। অসমিয়া মিডিয়ার খবর বিক্ষোভের ভয়ে তিনি নিজেই তাঁর কর্মসূচি কাটছাট করছেন।
ত্রিপুরাতেও অশান্তি চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে সামাজিক গণমাধ্যম।
জঙ্গিরাও বিলটির বিরোধিতায় সরব। ত্রিপুরার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এনএলএফটি প্রথম আলোকে পাঠানো বিবৃতিতে মঙ্গলবার উপজাতি ছাত্রদের ওপর পুলিসের গুলিচালনার কড়া সমালোচনা করেছে।
পাশাপাশি, আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফর আলোচনাপন্থী দলের নেতা অনুপ চেটিয়া বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে আন্দোলন চলবেই। কোনো অবস্থাতেই বিলটি মানবে না তাঁরা।