তারকা প্রার্থীদের ওপর মোহ কমছে তৃণমূলের

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

ভারতের আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। তবে তারকা প্রার্থীদের ওপর মোহ কমছে দলটির। এবার তারা খুঁজছে রাজনৈতিক প্রার্থী।

চলতি বছরের মার্চ বা এপ্রিল মাসে ভারতের সংসদ লোকসভার ৫৪৩টি আসনে এই নির্বাচন হওয়ার কথা। তাই মাঠে নেমে পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিজেপি চাইছে, প্রধানমন্ত্রী পদে ফের আসুক মোদি। কংগ্রেস চাইছে মোদির বদলে আসুক রাহুল গান্ধী। আবার তৃণমূল চাইছে এবার নতুন মুখ আসুক মমতা। এই নিয়ে এখন রাজনৈতিক ময়দানে লড়াই তুঙ্গে। চলছে নিজেদের দলে ভেড়ানোর লড়াই।

তৃণমূল অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে বলেছে, এবার আর পশ্চিমবঙ্গে ঠাঁই পাবে না অন্য কোনো দল। এককভাবে জিতবে তৃণমূল। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের সব কটিই আসবে তাদের ঝুলিতে। বসে নেই বিজেপি। তারাও দাবি করেছে ২২টি আসনে জিততে চলেছে তারা। তবে বাম দল ও কংগ্রেস এখনো ঘোষণা দেয়নি তারা কত আসনে জিততে চলেছে।

তৃণমূল এত জোর দিয়ে ৪২ আসনে জেতার কথা বললেও তাদের হারার আশঙ্কাও আঘাত করছে অন্দরে। ইতিমধ্যে তাদের দলেরই দুই সাংসদকে বহিষ্কার করেছে দল। এর মধ্যে একজন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি হলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। আর অন্যজন হলেন বীরভূমের বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা। তবে হাজরাও অবিলম্বে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তেমন খবর রাজনৈতিক মহলে প্রচার হয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তৃণমূলের অন্য পাঁচ সাংসদ ছেড়ে দিতে পারেন সাংসদ পদ। অথবা তাঁরা দল থেকে বাদও পড়তে পারেন। এই পাঁচের তালিকায় রয়েছেন চলচ্চিত্র তারকা তাপস পাল, সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেন, ফুটবল তারকা প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নারদ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অপরূপা পোদ্দার। যদিও এখনো তৃণমূল এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। তাপস পাল তো বেফাঁস মন্তব্য আর রোজভ্যালি দুর্নীতি কাণ্ডে জড়িয়ে দল থেকে এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এবার তারকা প্রার্থীদের ওপর মোহ অনেকটা কেটে গেছে তৃণমূলের । এখন তারা রাজনৈতিক প্রার্থীদের দিকে ঝুঁকছে। কারণ গত ২০১৪ সালে যেসব তারকা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে জিতিয়ে এনেছিল দল, তাঁদের কাছ থেকে আশানুরূপ ফল পায়নি দল। বরং এসব প্রার্থীর অধিকাংশই লোকসভায় নিয়মিত উপস্থিত হননি। বিতর্কে অংশ নেননি। প্রখ্যাত অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় তো দীর্ঘ চার বছর আট মাস পর এই প্রথম লোকসভায় মুখ খুলেছিলেন গত ৩১ ডিসেম্বর। তৃণমূলের এবার লক্ষ্য স্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া। যদিও সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেন, তাপস পাল, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও রয়েছেন তারকা সাংসদ শতাব্দী রায়, নায়ক দেব প্রমুখ ।

জানা গেছে, তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার চাইছেন কাজে যাঁরা এগিয়ে রয়েছেন তাঁদের প্রার্থী করতে। যাঁরা কোনো কাজ করেননি, সময় দেননি দলকে, সংসদেও যাঁদের কর্মকাণ্ড খারাপ—এমন সাংসদদের এবার মনোনয়ন না দিতে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে যাঁরা তৃণমূলের জোড়া ফুল ছেড়ে বিজেপির পদ্মফুলের দিকে ঝুঁকে আছেন, তাঁদের এবার মনোনয়ন না–ও দিতে পারে দল।