শতায়ু পাকিস্তানি নারী পেলেন ভারতের নাগরিকত্ব

যমুনা বাঈ। ছবি: সংগৃহীত
যমুনা বাঈ। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে দেশের মাটি স্বীকার করে নিল তাঁকে। দীর্ঘ ৭২ বছর অপেক্ষার অবসান হলো যমুনা বাঈয়ের। গতকাল রোববার যমুনা ভারতের নাগরিকত্ব পান। ১০১ বছর বয়সে এসে পরিচয় থেকে মুছে গেল ‘পাকিস্তানি হিন্দু নারীর’ তকমা। গড়লেন অনন্য রেকর্ড। পুরুষ-নারীভেদে তিনি হলেন প্রবীণতম ব্যক্তি, যিনি ভারতের নাগরিকত্ব অর্জন করলেন। এর আগে কোনো নারী বা পুরুষ এত বেশি বয়সে নাগরিকত্ব পাননি।

যমুনা বাঈয়ের জন্ম অবিভক্ত ভারতে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় যমুনা বাঈয়ের বসতঘর ছিল অবিভক্ত ভারতের রাজস্থানে। দেশভাগের পর তাঁর বসতঘর পড়ে পাকিস্তান অংশ। যমুনা পরিবার নিয়ে ভারতের রাজস্থানে আর ফিরে আসেনি। সেখানেই তিনি এক মুসলিম জমিদারের বাড়িতে জমির কাজ শুরু করেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা করতেন জুমের কাজ।

১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর যমুনার পরিবারে নেমে আসে বিপর্যয়। যে জমিদারের জমিতে কাজ করতেন, তাঁরা আর হিন্দু যমুনাদের সুজনজরে দেখছিলেন না। অগত্যা দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

২০০৬ সালের আগস্ট মাসে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের আটারি-পাকিস্তানের ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন যমুনা। ঠাঁই নেয় ভারতের রাজস্থানে। পাকিস্তান থেকে ফিরে আসে যমুনার পরিবারকে সেদিন সুনজরে নেয়নি ভারতের রাজস্থান রাজ্যের প্রশাসনও। প্রশাসনের নানা কর্মকর্তা বারবার ছুটে আসে এই যমুনার কাছে। নানা প্রশ্নে জর্জরিত করেন।

এভাবেই চলছিল। এক দিশেহারা হয়েই কাটছিল যমুনা বাঈদের জীবন। ২০১৫ সালে স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেন যমুনা বাঈ। তিন বছর পর যমুনা পেলেন সেই সোনার হরিণ। ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের আওতায় নাগরিকত্ব পেয়েছেন তিনি।

জীবনের শত বছর পার করে স্থায়ী ঠিকানা পেলেন যমুনা। এতেই খুশি এই নারী। বলেন, ‘এবার সত্যিই আমরা খুশি হলাম। এবার পরিবারের অন্যদের জন্য আবেদন করা হবে।’

যমুনা বাঈয়ের ছেলে আত্মারাম জানান, তাঁর ঠাকুরদাদার বাসস্থান ছিল এই ভারতের রাজস্থানে। এবার মা নাগরিকত্ব পাওয়ায় সবাই খুশি। তাঁরা আশা করছেন, পরিবারের সবাইকে ভারত সরকার নাগরিকত্ব দেবে। সেদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।

যমুনা বাঈ এখন থাকছেন রাজস্থানের যোধপুরের সোধারি ধানি গ্রামে।