৯/১১ হামলায় রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি

মার্কিন নাগরিক জেসন স্পিন্ডলার। টুইন টাওয়ারের হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। ছবি: ফেসবুক
মার্কিন নাগরিক জেসন স্পিন্ডলার। টুইন টাওয়ারের হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। ছবি: ফেসবুক

যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১–র ভয়াবহ হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। সেই হামলায় আহত অনেক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। হামলার পর জীবনের মোড়ও কিছুটা ঘুরে গিয়েছিল। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে মন দেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতেন। ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও বাজারব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করতেন।

কে জানত আরেকটি ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হতে হবে মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেসন স্পিন্ডলারকে, যা কেড়ে নেবে তাঁর প্রাণ। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির বিলাসবহুল হোটেলে গতকাল বুধবারের সন্দেহভাজন জঙ্গি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের একজন জেসন।

নাইরোবির বিলাসবহুল ওই হোটেলে হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ২১–এ পৌঁছেছে। আহত ২৮ জন। এখনো ১৯ জন নিখোঁজ। হামলায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে। আল–কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সোমালি জঙ্গি দল আল–শাবাবকে নাইরোবিতে ওই হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। কেনিয়াকে এই জঙ্গি দল শত্রুপক্ষ বলে মনে করে। কারণ, ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে সোমালিয়ায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কেনিয়া সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল।

৯/১১-র হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাততলায় কাজ করতেন জেসন। ছবি: সংগৃহীত
৯/১১-র হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাততলায় কাজ করতেন জেসন। ছবি: সংগৃহীত

কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জেসনের মৃত্যু নিয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জেসনের মা সারাহ ও ভাই জোনাথন তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমেও তাঁদের মৃত্যুর খবর এসেছে।

জোনাথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘নাইরোবিতে সন্ত্রাসী হামলায় আমার ভাই জেসন স্পিন্ডলার নিহত হয়েছে। জেসন ৯/১১–র হামলা থেকে বেঁচে এসেছিলেন। আমি নিশ্চিত, সৃষ্টিকর্তা অপরাধীদের শাস্তি দেবেন।’

কেনিয়ায় হামলায় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি
কেনিয়ায় হামলায় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি

জেসন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেছেন। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ল স্কুলেও পড়াশোনা করেন। পেরুর শান্তি বাহিনীতেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জেসন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিনিয়োগ ব্যাংক সলোমন স্মিথ বার্নেতে কাজ করতেন। আল–কায়েদার হামলায় টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হওয়ার সময় জেসন কর্মস্থলেই ছিলেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাততলায়। তাঁর সহকারী কেভিন ইউ বলেন, ৯/১১–র ওই হামলা থেকে জেসন শুধু বেঁচেও যাননি, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে সহায়তাও করেন। ওয়াশিংটন পোস্টকে ইউ বলেন, এমনও হতে পারে, নাইরোবিতে হোটেলের বাইরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর জেসন সাহায্যের জন্য ভেতরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি এ রকমই একজন মানুষ ছিলেন।

হামলায় নিহত ব্যক্তিদের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি
হামলায় নিহত ব্যক্তিদের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি

এই হামলার পর জেসনের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ল স্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর আ দেভ নামে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর বাজারব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও কাজ করেন।

আগামী সোমবার জেসনের ৪১তম জন্মদিন। ওই দিন তাঁর পরিবার ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছে।
আরও পড়ুন 
কেনিয়াকেই কেন বেছে নিচ্ছে আল-শাবাব?
আল শাবাবের যৌনদাসীরা 
৯/১১-এর ধাক্কা শেষ হবে কবে?