বিজেপির সাইকেলযাত্রা, মমতা বাজাবেন 'মৃত্যুঘণ্টা'

পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রার পরিবর্তে শেষ পর্যন্ত সাইকেলযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিজেপির রথযাত্রার অনুমতি না দেওয়ায় আদালতের নির্দেশ মেনে এবার রাজ্যের সর্বত্র সাইকেলযাত্রার আয়োজন করেছে তারা। ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সাইকেলযাত্রা। এই সাইকেলযাত্রার মাধ্যমে বিজেপির কর্মী ও সমর্থকেরা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে শামিল হবেন।

এ ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সভাসমাবেশ করবে বিজেপি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ যোগ দেবেন এই রাজ্যের পাঁচটি বড় জনসভায়। ২০ জানুয়ারি মালদহ, ২১ জানুয়ারি সিউরি ও ঝাড়গ্রাম, ২২ জানুয়ারি কৃষ্ণনগর ও জয়নগরে এই জনসভাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠেয় সমাবেশ যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আরও দুটি জনসভা করবেন পশ্চিমবঙ্গে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে রথযাত্রার অনুমতি না দেওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে দলটি। গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কাকে মাথায় রেখে এক নির্দেশে অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি জানান। তবে সভা–সমিতি ও মিটিং–মিছিল করতে পারবে বিজেপি। এ ছাড়া রথযাত্রা করতে হলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আবারও অনুমতি নিতে হবে। এর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়ে দেওয়া হয়, রথযাত্রা হলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। রাজ্য সরকারের সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রথযাত্রার অনুমতি দেননি।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার রথযাত্রার জন্য আবার আবেদন জানাতে রাজ্য সচিবালয় নবান্নে যান বিজেপি নেতারা। তবে সেখানে তাঁরা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। পরে বিজেপির নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে তাঁরা ভবানী ভবনে রাজ্য সরকারের অন্য দপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন।

চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের নির্বাচনের কথা। তাই রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী ঝড় তোলার জন্য বিজেপি সিদ্ধান্ত নেয় ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ নামে তিনটি প্রচাররথ বের করার। রথ তিনটি বের হবে রাজ্যর তিন প্রান্ত থেকে। সেই রথযাত্রায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে—এই আশঙ্কায় রাজ্য সরকার বিজেপিকে রথযাত্রা করতে অনুমতি দেয়নি।

বিজেপির ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজাবেন মমতা
তৃণমূল কংগ্রেস আগামী শনিবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজন করেছে এক মহাসমাবেশের। বিজেপিকে হটানোর লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে এই মহাসমাবেশের। এতে যোগ দেবেন বিজেপিবিরোধী অন্তত ২২টি দলের নেতৃবৃন্দ।

তৃণমূল বলেছে, এই সমাবেশ থেকে ডাক দেওয়া হবে মোদি সরকারকে হটানোর। সমাবেশে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে বিজেপির প্রতীকী ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজাবেন। ওই সমাবেশে বিজেপিবিরোধী নেতারা যোগ দেবেন। এঁদের মধ্যে থাকবেন কর্ণাটকের জনতা দল (সেক্যুলার) নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী এইচ কুমারস্বামী, ই দলেরই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ দেবগৌড়ও, জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লাহ, কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী দলের নেতা অখিলেশ যাদব, অন্ধ্র দেশের মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের অন্যতম নেতা ও লালুপুত্র তেজস্বী যাদব, তামিলনাড়ুর ডিএমকে দলের নেতা এম কে স্ট্যালিন, বিহারের লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতা শারদ যাদব, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির নেতা শারদ পাওয়ার, ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির বিদ্রোহী নেতা যশোবন্ত সিনহা, শত্রুঘ্ন সিনহা, অরুণ শৌরি, ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খন্ড বিকাশ মোর্চার নেতা বাবুলাল মারান্ডি, অরুণাচলের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গেগং আপাং, শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউতসহ আরও অনেকে। সব মিলিয়ে ওই দিন বিজেপিবিরোধী ২২টি দলের নেতাদের যোগ দেওয়ার কথা আছে। তবে সমাবেশে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাম দল।

মহাসমাবেশ ঘিরে বড় বড় তোরণ, পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো পশ্চিমবঙ্গ। ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৈরি করা হচ্ছে পাঁচটি মঞ্চ। একটিতে বসবেন মমতাসহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতা ও মন্ত্রীরা। আরেকটিতে বসবেন তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কেরা। তৃতীয় মঞ্চে থাকবেন তৃণমূলের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ। আর দুটি মঞ্চে থাকবে বিশিষ্টজনসহ সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।

বিভিন্ন রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা–কর্মীদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য থাকছে ১০০টি ক্যাম্প। তাঁদের থাকার জন্য থাকছে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ মিলনায়তন, সল্টলেক পৌরসভার খেলার মাঠ ও বিভিন্ন ধর্মশালা। দুপুর ১২টায় শুরু হবে সমাবেশ। আর এই সমাবেশকে সফল করার জন্য থাকবে তৃণমূলের পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এদিন যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে পুলিশ। তৃণমূল আশা করেছে, সমাবেশে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষ যোগ দেবে। নেতারা জানান, ব্রিগেড সমাবেশের দিন মমতাকে ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেবেন তাঁরা।