আস্থা ভোটে পার পেয়েই বিরোধীদের সঙ্গে বৈঠকে মে

আগামী সোমবারের মধ্যে সংসদে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স
আগামী সোমবারের মধ্যে সংসদে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স

যেন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। কোনোটিতে হারছেন, আবার কোনোটিতে জিতছেন—কিন্তু দম ফেলার ফুসরত নেই। গত মঙ্গলবার ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরদিন গতকাল বুধবার তিনি আস্থা ভোটের মুখোমুখি হন। এতে মাত্র ১৯ ভোটের ব্যবধানে টিকে গেছে থেরেসা মে’র সরকার।

বুধবার স্থানীয় সময় ৭টায় অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে পার পেয়েই থেরেসা মে রাতে বিরোধী দলীয় নেতাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠকে বসেন। তাঁর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ আগামী সোমবারের মধ্যে সংসদে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করা।

বিদ্যমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হবে। বিচ্ছেদের বিশৃঙ্খলা এড়াতে হলে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে উভয় পক্ষকে।

দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টার পর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে গত বছরের নভেম্বরে ইইউর সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সেই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। এতে ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর জের ধরে বিরোধী দল লেবার পার্টি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত ওই আস্থা ভোটে ৩২৫ জন আইনপ্রণেতা সরকারের পক্ষে অবস্থান নেন। আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ৩০৬টি।

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ১১৮ জন আইনপ্রণেতা এবং সরকারের শরিক দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির ১০ আইনপ্রণেতা সরকারের ব্রেক্সিট বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু আস্থা ভোটে এরা সবাই সরকারকে সমর্থন করেছেন। ফলে কোনো পক্ষে কোনো বিদ্রোহী ভোট পড়েনি। পরিস্থিতি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যে শরিক দলের ১০টি ভোট বিপক্ষে গেলেই মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পতন ঘটত থেরেসা মে সরকারের।

ফলাফল পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় থেরেসা মে বলেন, এখন তাঁর কাজ হবে ব্রেক্সিটের পক্ষে জনগণের দেওয়া রায় বাস্তবায়নে চেষ্টা অব্যাহত রাখা। ব্রেক্সিট অচলাবস্থার সমাধানে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান। রাতেই তিনি লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি) ও প্লাইড কামরি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন শর্ত দিয়েছেন, যে কোনো আলোচনায় বসার আগে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা নাকচ করতে হবে।

বৈঠক পরবর্তী ভাষণে থেরেসা মে বলেন, ‘আমি অত্যন্ত হতাশ যে লেবার নেতা এখন পর্যন্ত অংশ নিতে রাজি হননি। তবে আমাদের দরজা সব সময় খোলা।’ নিজ স্বার্থ সরিয়ে রেখে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় সবাইকে গঠনমূলকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের নেতা ভিন্স ক্যাবল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি পুনরায় গণভোটের দাবির কথা তুলে ধরেছেন। এসএনপি নেতা ইয়ান ব্ল্যাকফোর্ড বলেন, পুনরায় গণভোট কিংবা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে সময়ের প্রয়োজন। তাই ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা (আর্টিকেল ফিফটি) স্থগিত করার কথা বলেছেন তিনি। প্লাইড কামরির নেতা লিজ স্যাভাইল রোবার্ট জানান, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা নাকচ করার পাশাপাশি পুনরায় গণভোটের পক্ষে তিনি যুক্তি দিয়েছেন।

সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরাও বিরোধী দলের অন্যান্য প্রভাবশালী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এ ছাড়া সরকারি দল ও শরিক দলের বিদ্রোহীদের সঙ্গেও বৈঠক হবে। এসব আয়োজনের সবকিছুই গৃহবিবাদ নিরসন করে সম্মিলিত একটি প্রস্তাব প্রণয়নের চেষ্টা মাত্র। কিন্তু ইইউ’র সঙ্গে ফের দেন-দরবারের বিষয়টি এখনো রয়েই গেছে।