অ্যাসাঞ্জের গোপন বৈঠকের খোঁজ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

গোপন নথি প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলা উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ছয় বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাঁর এই আশ্রয় এখন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। গতকাল শুক্রবার মার্কিন কর্মকর্তারা অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দেওয়া দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

ইকুয়েডরের সরকারি সূত্র বলছে, সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সাবেক চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্ট ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কথিত বৈঠক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা খোঁজ নিচ্ছেন।

নভেম্বরে অ্যাসাঞ্জ ও ম্যানাফোর্টের ওই আলোচনা বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দ্য গার্ডিয়ান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুজন কমপক্ষে তিনবার সাক্ষাৎ করেছেন। ২০১৬ সালে উইকিলিকসের পক্ষ থেকে মার্কিন নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ই-মেইল প্রকাশের আগে একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁদের।

অ্যাসাঞ্জ ও ম্যানাফোর্ট অবশ্য দূতাবাসে পরস্পরের সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেন।

গতকাল উইকিলিকসের পক্ষ থেকে ‘ইকুয়েডরের কূটনীতিকদের যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদ’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইকুয়েডর সরকার অ্যাসাঞ্জের বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছে।

সূত্র বলছে, ইকুয়েডরের কূটনীতিকেরা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অনুরোধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ইকুয়েডরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ মন্তব্য করেননি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সাবেক চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্ট কর ফাঁকি, ব্যাংক জালিয়াতি, বিদেশি ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়াসহ আটটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ফেডারেল তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক চুক্তি অনুসারে রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের সঙ্গে সহযোগিতাতেও তিনি সম্মত হয়েছেন।

উইকিলিকসের পক্ষ থেকে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনকে ‘মনগড়া’ বলে উল্লেখ করা হয়। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কয়েকটি সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ইকুয়েডরে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী কার্লোস পভেদা বলেন, দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি তাঁকে।

টুইটারে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উইকিলিকস বলেছে, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেন এন মরেনো দূতাবাসে অ্যাসাঞ্জের উপস্থিতি চাইছেন না। ইকুয়েডরের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। অ্যাসাঞ্জকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে তারা পুরো উল্টো দিকে অবস্থান নিয়েছে।

শুরুতে সুইডেনে হস্তান্তর ঠেকাতে লন্ডনের ওই দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। সুইডেনে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে ওই তদন্ত বন্ধ করা হয়েছে। অ্যাসাঞ্জ সুইডেনের ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই জিজ্ঞাসাবাদের নামে আসলে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর প্রস্তুত শুরু হবে।

সূত্রমতে, অ্যাসাঞ্জকে বের করে দেওয়ার জন্য ইকুয়েডরের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লেন এন মরেনো ক্রমাগত মার্কিন চাপে রয়েছেন। অ্যাসাঞ্জের ওপর খ্যাপা স্পেনও চায় অ্যাসাঞ্জকে বের করে দিক ইকুয়েডর। আর স্পেনের বিরাগভাজন হওয়ার কারণ হচ্ছে দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী কাতালোনিয়া আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে সমর্থন দিয়ে টুইট করেছিলেন অ্যাসাঞ্জ।

সম্প্রতি ইকুয়েডর সরকার অ্যাসাঞ্জকে দেওয়া সুবিধা কমিয়ে দেওয়া শুরু করেছে।

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দূতাবাস ছেড়ে আসামাত্র অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তারা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবে।

অ্যাসাঞ্জ দূতাবাস থেকে বের হলে যুক্তরাষ্ট্রের দিক দিয়ে তাঁর ভাগ্যে কী ঘটবে, তা বলা মুশকিল। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীর দাবি, প্রায় আট বছর ধরে মার্কিন কর্মকর্তারা গোপন গ্র্যান্ড জুরি তদন্ত পরিচালনা করছেন অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: