উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপিকে 'একঘরে' করার উদ্যোগ

ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে গিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে ‘একঘরে’ হতে চলেছে শাসক দল বিজেপি। এখানকার আট রাজ্যেই চলছে বিলটির বিরোধিতা। আজ মঙ্গলবার আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে অ-বিজেপি দলগুলি একযোগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনার্ড সাংমার ডাকা এই বৈঠকে আট রাজ্যেরই আঞ্চলিক দলগুলো উপস্থিত থেকে জানিয়ে দিয়েছে, কোনো অবস্থাতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল মানা হবে না।

ভারতে সামনেই লোকসভা নির্বাচন। শাসক দল বিজেপি এই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভারতকে। কারণ এখানকার আট রাজ্যেই সরকারের অন্যতম জোট সঙ্গী বিজেপি। দেশের ৫৪৫টি আসনের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে রয়েছে ২৫টি আসন। বিজেপির লক্ষ্য এখান থেকেই অন্তত ২১টি আসন নিশ্চিত করা। কিন্তু তাঁদের লক্ষ্যকে সমস্যায় ফেলেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী। কারণ শরিক দলগুলোই এই বিলের বিরোধিতায় সরব। আসামে এরই মধ্যে শরিক দল আসাম গণপরিষদ তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করেছে।

বিজেপি সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দু, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি, শিখ ও বৌদ্ধ শরণার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিলটি এরই মধ্যে লোকসভায় পাস করেছে। এখন রাজ্যসভার অনুমোদন পেলেই আইনে পরিণত হবে বিলটি। কিন্তু এই বিলকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। কংগ্রেসসহ প্রায় প্রতিটি অ-বিজেপি জাতীয় দলই বিলের বিরোধিতায় সরব। আন্দোলনে নেমেছে বহু আঞ্চলিক দল। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন বিজেপির শরিক দলের নেতারা।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি সভাপতি কনার্ড সাংমা ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী তথা এমএনএফ নেতা জোরাম থাঙ্গা, মণিপুরের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি নেতা জয়কুমার সিং, ত্রিপুরার উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী তথা আইপিএফটি নেতা মেবারকুমার জামাতিয়া, অগপ নেতা তথা আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত, এনপিএফ নেতা তথা নাগাল্যান্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী টিআর জৈইলিংয়ের মতো হেভিওয়েট নেতারা। বৈঠক শেষে কনার্ড সাংবাদিকদের জানান, এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া হবে না। বিলটি প্রত্যাহারের দাবিতে একযোগে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সুদৃঢ় করার কথাও বলেছে।

বিজেপির ‘বন্ধু’ দলগুলির এ ধরনের উদ্যোগের পাশাপাশি এ দিন ছাত্র সংগঠন আসু আসাম জুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। তাঁদেরও দাবি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বাতিল করতে হবে। আসুর অবরোধে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় রাজ্যের বেশির ভাগ শহরে। অন্যদিকে বিজেপির তরফে নাগরিকত্বের বিরোধিতার জন্য দায়ী করা হয় কংগ্রেসকে। আসাম প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত দাসের অভিযোগ, কংগ্রেসই ভুল ব্যাখ্যা করে নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তবে কংগ্রেস এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপিকেই বিভেদের রাজনীতি করার জন্য দুষছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়ার মতে, মানুষের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়ে আসামকে অশান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে বিজেপি।