হিমালয়ের হিমবাহ গলছে, আসছে ভয়াবহ বন্যা-খরা

বৈশ্বিক তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে হিমালয় ও হিন্দুকুশ পর্বতমালার হিমবাহের জন্য হুমকি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। ২১০০ সাল নাগাদ এই হিমবাহের অর্ধেক গলে নিঃশেষ হবে। এর ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্ভরশীল ১৬৫ কোটি মানুষের জীবন ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। প্রথমে প্রবল বন্যা, আর তারপর অন্তহীন খরা—পুরো হিমালয়ের প্রভাববলয়ে থাকা মানুষের জীবনে এটিই ভবিতব্য হতে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদনে সম্প্রতি এই হুঁশিয়ারি জানানো হয়েছে।

গত সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ২১০ জন বিজ্ঞানী কাজ করেন এটি তৈরিতে। এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) গবেষক ফিলিপাস ওয়েস্টার। তিনি বলেন, ‘এটি এমন ধরনের এক জলবায়ু সংকটের রূপ উন্মোচন করেছে, যা আপনি এর আগে কখনোই শোনেননি।’

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ দ্রুত কমানো না গেলে হিমালয়-হিন্দুকুশ হিমবাহের দুই-তৃতীয়াংশ বরফ গলে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। এমনকি বিশ্ব যদি এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নামিয়ে আনতে পারে, তবু অন্তত এক-তৃতীয়াংশ বরফ গলে নিঃশেষ হবেই। অথচ এই হিমবাহ পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস। এই অঞ্চলের আটটি দেশের ২৫ কোটি মানুষের জীবন সরাসরি এর ওপর নির্ভরশীল। এই অঞ্চলে রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেটু (কে২)। পৃথিবীর তৃতীয় মেরু নামে পরিচিত এই দুই পর্বতশৃঙ্গেই উত্তর ও দক্ষিণ মেরু ব্যতীত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বরফ জমা রয়েছে। এই সুবিশাল বরফক্ষেত্র এভাবে গলতে থাকলে ১০০ বছরের কম সময়ের মধ্যেই এর শিলাময় পর্বত অবমুক্ত হয়ে পড়তে পারে।

আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই এই বরফ গলা আরও বাড়তে পারে। কারণ, ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ছে বৈ কমছে না। এই অঞ্চলের বায়ু দূষিত হচ্ছে মূলত ইন্দো-গাঙ্গেয় সমতল এলাকা থেকে বাতাসে জমা হওয়া কার্বনে। বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষিত অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষে রয়েছে ওই এলাকা। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি মেনে যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ে, তাহলে হিমবাহের অর্ধেক ২১০০ সালের মধ্যে গলে নিঃশেষ হবে। আর যদি বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পযুগের আগের অভীষ্ট দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে, তবু ৩৬ শতাংশ হিমবাহ উধাও হবে নিশ্চিত। আর তা থামানো না গেলে, এই অঞ্চলে বর্ষা ঋতুতে নাটকীয় পরিবর্তন আসবে।

এই হিমবাহ গঙ্গা, সিন্ধু, হোয়াংহো (ইয়েলো), মেকং, ইরাবতীসহ বিশ্বের বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানির উৎস।