রাজীব ইস্যুতে রাজনৈতিক বিতর্ক

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ইস্যুতে এখন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আরম্ভ হয়েছে।

কলকাতা পুলিশ ও সিবিআইয়ের মধ্যে অচলাবস্থা কাটান সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেন, চিটফান্ডের তদন্তে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। তাঁকে সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হতে হবে। তবে সিবিআই রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না।

সিবিআই একাধিক চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্ত করছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই। সিবিআই সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অবমাননার অভিযোগ এনেছে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। সারদা, রোজভ্যালিসহ একাধিক চিটফান্ডে কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্যের লাখ লাখ মানুষ। বহু রাজনীতিক এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। শাসক দলের একাধিক নেতাকে এই অভিযোগে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে। দীর্ঘদিন ধরে সিবিআই এই তদন্ত চালাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের অভিযোগ, ভোটের আগে সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক দল। কলকাতায় তৃণমূল নেত্রীর ধরনাকে সমর্থন করেছেন অধিকাংশ বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: রয়টার্স
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: রয়টার্স

পুলিশ-সিবিআই সংঘাতের জেরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে করা মামলার শুনানি শেষে রায়ের পর গতকাল কলকাতায় তিন দিনের অবস্থান ধর্মঘট বা ধরনা তুলে নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাদের নৈতিক জয় হয়েছে। জয় হয়েছে রাজ্যের। সিবিআই আর পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জেরার সময় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। এটিই তাদের নৈতিক জয়।

অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর ভারতের কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রমাণিত হয়ে গেল কলকাতা পুলিশের আদালত অবমাননার কথা। তাঁরা যে সিবিআইর কাজে বাধা দিয়ে আদালত অবমাননা করেছেন তা প্রমাণিত। তিনি প্রশ্ন রাখেন, একজন পুলিশ কমিশনারকে বাঁচাতে কেন এত ব্যাকুল মমতা? এর থেকেই এটা স্পষ্ট, পুলিশ কমিশনার চিটফান্ড-সংক্রান্ত অনেক কিছুই জানেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সেই তথ্য ফাঁস হওয়ার ভয়েই কি এত তৎপরতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর?

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, দোষী ব্যক্তিরা আর এবার কেউ পার পাবে না।

রাজ্য কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তুলে বলেছেন, নিজেরা নির্দোষ হলে কেন তারা তদন্তে বাধা দিচ্ছেন?

আর সিপিএম নেতা ও সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেছেন, কেন পুলিশ কমিশনারকে বাঁচাতে চাইছেন মমতা?

মমতা তাঁর অবস্থান মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের পাশেই আছেন। তিনি বলেন, ‘রাজীব কুমার একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা। রাজীব কুমারসহ এই রাজ্যের সব পুলিশ আমার গর্ব। এই রাজ্যের পুলিশ কর্মকর্তা যদি অসম্মানিত হন, দোষ না থাকলেও দোষী সাব্যস্ত হন, প্রমাণ ছাড়া বাড়িতে গিয়ে যদি তাঁকে কেউ গ্রেপ্তার করতে চায়, তার প্রতিবাদ করতেই হবে। তাঁরা যেন এটা না ভাবেন যে দিল্লির তাঁরা বড় নেতা?’

ভারতের কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। ছবি: টুইটার
ভারতের কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। ছবি: টুইটার



মমতার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের আরজেডি দলের নেতা তেজস্বী যাদব। তাঁরা মমতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে কলকাতায় এসে অবস্থান মঞ্চে যোগ দেন।

এদিকে রাজীব কুমার গতকাল এক চিঠিতে ৮ ফেব্রুয়ারি শিলংয়ে সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হতে চান বলে জানিয়েছেন। যদিও সিবিআই বলেছে, তারা তারিখ নির্ধারণ করে জেরার সময়সূচি জানাবে।

সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ করে, সারদা ও রোজভ্যালি দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তের স্বার্থে গত রোববার রাজীব কুমারের বাসভবনে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয় এবং বেআইনিভাবে সিবিআইয়ের কর্মকর্তাদের জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় শেক্সপিয়ার সরণি থানায়। এমনকি কলকাতা পুলিশ হেনস্তা করে বলেও সিবিআই অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্টে।

অন্যদিকে, সিবিআই যেমন কলকাতার পুলিশ কমিশনারসহ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সুপ্রিম কোর্টে, তেমনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও পাল্টা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানি গতকাল নির্ধারিত থাকলেও তা পিছিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ। পরবর্তী তারিখ কাল বৃহস্পতিবার।