রাফাল নিয়ে নতুন বিতর্ক ভারতে

রাফাল যুদ্ধবিমান। ফাইল ছবি
রাফাল যুদ্ধবিমান। ফাইল ছবি

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে সমান্তরাল দর-কষাকষি চালিয়ে গেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কড়া আপত্তি জানিয়েছিল। সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ আজ শুক্রবার এ খবর প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আপত্তি সংক্রান্ত ‘নোট’ও তুলে দেওয়া হয়েছে।

রাফালসংক্রান্ত এই তথ্য চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘এই চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল, তা ফের প্রমাণ হলো। সুপ্রিম কোর্টের কাছে সরকার সেই তথ্য গোপন করেছে।’ রাহুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কেন সমান্তরাল দর-কষাকষি চালাচ্ছিলেন? আপনার আমার জন্য নয়, অনিল আম্বানির জন্য। এ থেকেই প্রমাণ হয় চৌকিদারই চোর।’

প্রতিবেদনটি লিখেছেন ‘দ্য হিন্দু’র সম্পাদক এন রাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রতিরক্ষাসচিব জি মোহন কুমার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জন্য এক নোট তৈরি করেন। তাতে লেখা হয়, ‘রাফাল কেনা নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও তার দল যে মনোভাব নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ভূমিকা তার পরিপন্থী ও বিপরীত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই সমান্তরাল দর-কষাকষি চালানো বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ তাতে মন্ত্রণালয়ের হয়ে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের গুরুত্বহীন করে তোলা হয়।’ প্রতিরক্ষা সচিব আরও লেখেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কাজে সন্তুষ্ট না হলে, প্রতিনিধিদের ওপর আস্থা না থাকলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় দর-কষাকষির বিকল্প উপায় নিতে পারে।’

এন রাম বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত গুরুতর। এই তথ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে গোপন করেছিল। এই কাজ আদালত অবমাননার শামিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যে সমান্তরাল আলোচনা চালাচ্ছিল, সুপ্রিম কোর্টকে তা জানানো হয়নি।’

ভোট যত এগোচ্ছে, রাফাল বিতর্ক ততই নতুন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। রাহুল বারবার এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত মাসে তিনি দেখা করেন গোয়ার অসুস্থ মুখ্যমন্ত্রী ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের সঙ্গে। তারপর তিনি বলেছিলেন, পারিকর তাঁকে বলেছেন, চুক্তি যে বদলানো হচ্ছে তা তাঁকে জানানো হয়নি। রাহুলের ওই মন্তব্য ঠিক নয় বলে জানিয়েছিলেন মনোহর পারিকর। কিন্তু তাতে বিতর্ক থেমে নেই। ‘দ্য হিন্দু’র এই প্রতিবেদন নতুন করে সেই বিতর্ক উসকে দিল। কংগ্রেস যেমন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলছে, বিজেপি তেমন বলছে, কংগ্রেস দেশের বায়ুসেনাকে দুর্বল করতে চায়। রাফাল চুক্তি বাতিল করতে তারা উৎসুক, কারণ তারা চুক্তি দালালির ভাগ পেতে চায়।

ভারতীয় বায়ুসেনার চাহিদামতো ফ্রান্সের দাসো কোম্পানির কাছ থেকে পূর্বতন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ৭৯ হাজার কোটি রুপিতে ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে কথাবার্তা চালায়। খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, ২৮টি সম্পূর্ণভাবে তৈরি রাফাল ভারতে আসার কথা ছিল। বাকি ১০৮টি তৈরি করা হতো রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডে (হ্যাল)। কংগ্রেসের চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বিমানপ্রতি খরচ পড়ত ৫৬০ কোটি রুপি। ক্ষমতাসীন হয়ে নরেন্দ্র মোদি সেই চুক্তি খারিজ করে ৫৯ হাজার কোটি রুপিতে ৩৬টি রাফাল কেনার নতুন চুক্তি করেন। ফ্রান্স সফর করার সময় তিনি সেই চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। হ্যাল-এর বদলে ‘অফসেট পার্টনার’ হয় অনিল আম্বানির সংস্থা রিলায়েন্স ডিফেন্স। কংগ্রেসের অভিযোগ, তিন গুণ বেশি দামে সরকার মাত্র ৩৬টি রাফাল কিনছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্ষতি করে ৪৫ হাজার কোটি রুপির ঋণখেলাপি কাছের শিল্পপতি অনিল আম্বানিকে ৩০ হাজার কোটি রুপি পাইয়ে দিয়েছে। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ ওঁলাদ গত বছর সে দেশের এক সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছিলেন, অনিল আম্বানির সংস্থাকে তাঁদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।