'ভেনেজুয়েলায় ত্রাণ পৌঁছাতে দিন'

স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার খাদ্য ও ওষুধবোঝাই অনেক ট্রাক পূর্বাঞ্চলীয় কলম্বিয়া সীমান্ত দিয়ে ভেনেজুয়েলায় প্রবেশের চেষ্টা করলে দেশটির সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেয়। ছবি: এএফপি
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার খাদ্য ও ওষুধবোঝাই অনেক ট্রাক পূর্বাঞ্চলীয় কলম্বিয়া সীমান্ত দিয়ে ভেনেজুয়েলায় প্রবেশের চেষ্টা করলে দেশটির সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেয়। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলায় চলমান ভয়াবহ মানবিক সংকটে সাড়া দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ত্রাণ পাঠানো শুরু করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ত্রাণ রয়েছে। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার খাদ্য ও ওষুধবোঝাই অনেক ট্রাক পূর্বাঞ্চলীয় কলম্বিয়া সীমান্ত দিয়ে ভেনেজুয়েলায় প্রবেশের চেষ্টা করলে দেশটির সেনাবাহিনী তাদের বাধা দিয়েছে। উপায় না পেয়ে ত্রাণবোঝাই ট্রাকগুলো কলম্বিয়ার কুকুতা এলাকার তিয়েনদিতাস সীমান্ত সেতুতে অবস্থান নিয়েছে। তারা এখন অপেক্ষা করছে ভেনেজুয়েলা কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেতের। 

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো বলেছেন, ‘ত্রাণ পাঠানো একটি রাজনৈতিক চাল। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর আগ্রাসনের পথ উন্মুক্ত হবে।’

এর আগে গত বুধবার কলম্বিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর বুকারামাঙ্গা থেকে এই ত্রাণের গাড়িবহর রওনা করলে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীরা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার ত্রাণের গাড়িবহর কুকুতা সীমান্তে পৌঁছালে তাঁরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। ভেনেজুয়েলা থেকে কুকুতায় বছরখানেক আগে আসা ইসরায়েল এসকোবার (৪২) নামের এক আইসক্রিম বিক্রেতা বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় থাকা আমার স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ত্রাণ পৌঁছালে হাঁপ ছেড়ে বাঁচব।’ ইয়াহাইরা গনসালেস (৬৪) নামে দেশটির আরেক অভিবাসী মাদুরোর উদ্দেশে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট, আমরা ভালো নেই। আমরা ভয়ংকরভাবে ভুগছি। আপনি ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিন।’ গনসালেস একসময় ‘চাভিস্তা’ (হুগো চাভেজপন্থী বামপন্থী) ছিলেন। সমাজতান্ত্রিক শাসনে অর্থনীতির দুরবস্থা দেখে তিনি চাভেজের উত্তরসূরি মাদুরোকে আর সমর্থন করেন না বলে জানান। অনেক অভিবাসী সীমান্তে ত্রাণের সমর্থনে মাদুরোবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার ‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ নিয়ে উরুগুয়ের রাজধানী মন্টিভিডিওতে ইন্টারন্যাশনাল কনটাক্ট গ্রুপের একটি জরুরি বৈঠক বসে। এটি গত ২৩ জানুয়ারির পর উদ্ভূত সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামের প্রথম বৈঠক। পাঁচ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতির প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি ভেনেজুয়েলায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দ্রুত সংলাপে বসার আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে ঘোষণা করা হয়, ভেনেজুয়েলায় অচিরেই কনটাক্ট গ্রুপ একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে। প্রতিনিধিদল দেশটিতে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে প্রতিশ্রুতি আদায়ে কাজ করবে।

মন্টিভিডিওতে ভেনেজুয়েলার প্রবাসী মাদুরো-সমর্থকেরা বৈঠকের বাইরে জড়ো হয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ভেনেজুয়েলায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি এলিয়ট অ্যাডামস বৃহস্পতিবার কনটাক্ট গ্রুপের সমালোচনা করে বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব দেশের এখন মাদুরোকে বাদ দিয়ে শুধু গুয়াইদোর বৈধ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত।

মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের প্রতি অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, মাদুরোর প্রতি একের পর এক হুমকি উচ্চারণ করে ওয়াশিংটন জাতিসংঘ সনদ ভঙ্গ করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ ভেনেজুয়েলায় সন্দেহের পাহাড় তৈরি করেছে।

আগাম নির্বাচন দেওয়ার ইইউর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন মাদুরো। তবে তিনি কনটাক্ট গ্রুপের বৈঠক থেকে করা সংলাপের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হুয়ান গুয়াইদো মাদুরোর সরকারের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে দাবি করেছেন, ‘সংলাপ মাদুরোর জন্য সময় কেনার অপকৌশল।’

বিশ্বের ৪০টি দেশের সমর্থন পাওয়া ভেনেজুয়েলার স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট গুয়াইদো বৃহস্পতিবার ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীর প্রতি ‘স্বৈরশাসক’ মাদুরোর পাশে না থেকে তাঁর পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে ভেনেজুয়েলার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার গুয়াইদোর প্রতি আনুগত্য জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। পরে দূতাবাসগুলো এটিকে হ্যাকারদের কাজ বলে দাবি করে। তারা মাদুরোর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য ধরে রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, কিউবা ও ইরান মাদুরোর পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।