অস্ট্রেলিয়ায় ৮ দিনের প্রধানমন্ত্রী

সুষ্ঠু রাজনীতিচর্চার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়া। জনগণের মতামত আর আইনের প্রতিপালনে কোনো আপস করে না দেশটিতে। তবে ভিন্নতাটা অন্য জায়গায়। দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার রেষারেষির চেয়েও অস্ট্রেলিয়ায় দলীয় কোন্দল সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। নিজের দলের সঙ্গে প্রায়ই মনোমালিন্যে জড়িয়ে পড়ে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এরপর একজোট হয়ে দলীয় ভোটে দলের প্রধান নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করে বসেন। ফলাফল, গত ১০ বছরে সরকার বদলেছে দুবার, আর প্রধানমন্ত্রী বদলেছে ছয়বার। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও দলীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী। মাত্র তিন দিনের দলীয় কোন্দলের মুখে পরে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল।

টার্নবুলও একই পন্থায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে জেতা প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন। এই দৃশ্য কেবল যে বর্তমান সরকারি দল লিবারেল পার্টিতে এমনটা নয়। দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও একই পথের যাত্রী। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন এ দলটিও প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করে তিনবার।

তবে অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রভাব থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দূরে রাখার নতুন নীতি চালু করেছে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। গত ডিসেম্বরের শুরুতে সংসদে নতুন একটি প্রস্তাব পেশ করে মরিসন। নতুন দলীয় নীতির আওতায় একজন প্রধানমন্ত্রী তাঁর পূর্ণকালীন মেয়াদ অর্থাৎ ৩ বছরই প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকবে। কোনো দলীয় নেতৃত্বের পরবর্তনের ফলে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করা যাবে না। তবে, দলের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করা যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার দলীয় রেষারেষিতে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর ঘটনা কিন্তু বেশ পুরোনো। আর এমন কারণেই অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে মাত্র ৮ দিনের প্রধানমন্ত্রীও। ১৯৪৫ সালে লেবার দলের সিদ্ধান্তে ৬ জুলাই দেশটির ১৫তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ফ্র্যাঙ্ক ফোর্ড। এর ৮ দিন পর ১৩ জুলাই আবার তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। দেশটির সবচেয়ে কম মেয়াদি প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় আরও অনেকে রয়েছেন।

১.

স্যার আর্লে পেজ। দল: ন্যাশনাল কান্ট্রি পার্টি। ১১তম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৩৯ সালের ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পেজ। ১০ম প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ মৃত্যুর ফলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পেজ।

২.
জন ম্যাকুইন। দল: ন্যাশনাল কান্ট্রি পার্টি। ১৮তম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জন ম্যাকুইন।

৩.
আর্থার ফেডেন। দল: ন্যাশনাল কান্ট্রি পার্টি। ১৩তম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪১ সালের ২৮ আগস্ট থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ফেডেন।

৪.
কেভিন রাড। দল: লেবার পার্টি। ২৬তম প্রধানমন্ত্রী। ২০১৩ সালের ২৭ জুন থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কেভিন রাড এর আগেও প্রায় আড়াই বছর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ছিলেন।

৫.
ক্রিস ওয়াটসন। দল: লেবার পার্টি। তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। ১৯০৪ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ক্রিস।

৬.
জর্জ রেইড। দল: ফ্রি ট্রেড পার্টি। চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। ১৯০৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে পরের বছর ৫ জুলাই পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জর্জ রেউড।

৭.
জোসেফ কুক। দল: কমনওয়েলথ লিবারেল পার্টি। ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। ১৯১৩ সালের ২৪ জুন থেকে ১৯১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কুক।

৮.
উইলিয়াম ম্যাকমাহন। দল: লিবারেল পার্টি। ২০তম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ম্যাকমাহন।

৯.
হ্যারোল্ড হল্ট। দল: লিবারেল পার্টি। ১৭তম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৬ সাল ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৯৬৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হল্ট । হ্যারোল্ড ১৯৬৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর রহস্যজনকভাবে সমুদ্রে গিয়ে হারিয়ে যান। এমনকি তাঁর মৃতদেহও খুঁজে পাওয়া যায়নি। হ্যারোল্ড অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মারা যান।

১০.
টনি অ্যাবট। দল: লিবারেল পার্টি। ২৮তম প্রধানমন্ত্রী। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন টনি অ্যাবট।