গর্ভ থেকে বের করে ভ্রূণের অস্ত্রোপচার!

কিছুদিনের মধ্যেই কোলজুড়ে আসবে সে—এমন আশাতেই প্রহর গুনছিলেন বেথান সিম্পসন। নিয়ম মেনে করছিলেন সব, রুটিনমাফিক হচ্ছিল শারীরিক পরীক্ষা। হঠাৎই যেন তছনছ করে দিল একটি সংবাদ। সম্প্রতি দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

যুক্তরাজ্যের এক্সেসের বাসিন্দা বেথান জানতে পারেন, তাঁর গর্ভে থাকা ২০ সপ্তাহের ভ্রূণটি জটিল ‘স্পাইনা বিফিডা’ রোগে আক্রান্ত। তার মেরুদণ্ডের গঠন ঠিকমতো হচ্ছে না। ব্যামফিল্ড হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, ‘স্পাইনা বিফিডা’ থাকলে মেরুদণ্ডের গঠন ঠিকমতো হয় না এবং মেরুরজ্জুর চারপাশে ঝিল্লি ছিল। ফলে শিশু জন্মানোর পর সারা জীবনের জন্য পঙ্গুও হয়ে যেতে পারে। তাঁরা সিম্পসন দম্পতিকে জানান, এসব ক্ষেত্রে হয় ভ্রূণটিকে নষ্ট করে ফেলতে হয় অথবা সন্তান জন্মের পর পঙ্গু হতে পারে—এ বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হয়। তাঁরা বেথানকে জানান, ভ্রূণের মেরুরজ্জুর অস্ত্রোপচার করলে সন্তান সুস্থভাবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২৬ বছরের বেথান ও ক্যারন দম্পতি চাননি অনাগত সন্তানকে হারাতে। মনকে শক্ত করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ভ্রূণের ২৪ সপ্তাহ বয়স নিয়ে লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে ভর্তি হন বিথান। যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়ামের একদল শল্য চিকিৎসক বেথানের গর্ভ থেকে ভ্রূণটিকে বের করে, কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রেখে অস্ত্রোপচার করেন। এরপর শিশুটিকে আবার মায়ের গর্ভে প্রবেশ করানো হয়।

বেথান বলেন, আমি শুনেছি, লন্ডনে গর্ভের যেসব শিশুর এই রোগ হয়, তাদের শতকরা ৮০ ভাগের পরিণতিই মৃত্যু। কিন্তু যখন জানলাম, ওকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় রয়েছে, আমরা অস্ত্রোপচারেই রাজি হয়ে গেলাম। আমরা জানতাম, ওই অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু সন্তানকে স্বাভাবিক জীবন দিতে ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম।

বর্তমানে বেথানের গর্ভের ভ্রূণটির বয়স ৮ মাস। বেথানের কথায় খুব দুষ্টু সে। মায়ের পেটের ভেতরে ক্রমাগত লাথি মেরে চলেছে। বেথানের স্বপ্ন, ইতিহাস সৃষ্টি করে তাঁর কোলজুড়ে আসবে সে। আগামী এপ্রিলে সন্তানটির ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছেন চিকিৎসকেরা।

তবে বেথানই প্রথম নন, ব্যামফিল্ড হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, বেথান যুক্তরাজ্যের চতুর্থ মা, যাঁর গর্ভস্থ ভ্রূণের এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।