জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা: পশ্চিমবঙ্গজুড়ে প্রতিবাদ, মিছিল

জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিলে মোমবাতি হাতে হাঁটেন রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিলে মোমবাতি হাতে হাঁটেন রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

গত বৃহস্পতিবার ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পুলওয়ামার অবন্তীপোড়ায় সিআরপিএফের গাড়িবহরে পাকিস্তানের জঙ্গিদের হামলায় পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে প্রতিবাদের ঝড়। গত শুক্রবার থেকে রাজ্যব্যাপী শুরু হয়েছে প্রতিবাদ মিছিল। চলছে ধিক্কার মিছিল, প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ, মৌন মিছিল, মোমবাতি মিছিল। ছাত্রছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছে। দাবি উঠেছে, পাকিস্তানি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সমুচিত জবাব দেওয়ার।

প্রতিটি মিছিল আর সমাবেশ থেকে দাবি উঠেছে জঙ্গি হামলার সমুচিত জবাব দিতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। তাই সময় এসেছে এবার পাকিস্তানি জঙ্গিদের জবাব দেওয়ার।

সিআরপিএফের ওপর এই নৃশংস হামলায় পশ্চিমবঙ্গের দুই বাঙালি জওয়ান শহীদ হয়েছেন। তাঁরা হলেন নদীয়ার পলাশিপাড়ার সুদীপ বিশ্বাস আর হাওড়ার বাউড়িয়ার বাবুল সাঁতরা। শোক মিছিল আর মোমবাতি মিছিল করেছেন ওই এলাকার মানুষ। গতকাল শনিবার রাতে এই দুই শহীদের দেহ তাঁদের বাসভবনে পৌঁছালে এলাকার মানুষ কেঁদে ফেলেন। রাতেই তাঁদের পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শনিবার সারা দিন ধরে এই দুটি এলাকার বাড়িতে চুলো জ্বলেনি। শহীদদের প্রতি সমবেদনা জানাতে অরন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী।

আজ রোববার এই দুই শহীদের এলাকায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দোকানপাট, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখে শহীদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানোর জন্য। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে রোববার রাজ্যের সর্বত্র শোক মিছিল, মৌন মিছিল এবং মোমবাতি মিছিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিল থেকে দাবি উঠেছে, মানুষ যুদ্ধ চায় না শান্তি চায়, মানুষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শাস্তি চায়।

জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে বামফ্রন্ট। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে বামফ্রন্ট। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এদিকে গতকাল শনিবার বিকেলে তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টও এই হত্যালীলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে সর্বত্র। বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড় থেকে কলকাতার ধর্মতলার গান্ধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিলে মোমবাতি হাতে হাঁটেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কলকাতার ধর্মতলার লেনিন মূর্তির পাদদেশ থেকেও বামফ্রন্ট প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিল যায় মিন্টু পার্ক পর্যন্ত। নেতৃত্ব দেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। এ ছাড়া কংগ্রেসও কলকাতায় আলাদা মিছিল করেছে। মমতা মোমবাতি মিছিলের পর ঘোষণা দেন, এই জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে তাঁর দল আজ গোটা রাজ্যের প্রতিটি এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করবে।

শুক্রবার বিকেলেও কলকাতায় সিপিএম প্রতিবাদ মিছিল করেছে। ধর্মতলা থেকে তারা মিছিল বের করে মহাজাতি সদন পর্যন্ত যায়। মিছিলে অংশ নেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সাংসদ মহম্মদ সেলিম, রবীন দেবসহ সিপিএমের নেতারা। এ ছাড়া বিজেপির ছাত্রসংগঠন এবিভিপি বিক্ষোভ মিছিল করেছে কলকাতায়। কংগ্রেস মিছিল করেছে কলকাতার মৌলালিতে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে মিছিল করেছে রাজ্যজুড়ে। দাবি তুলেছে সন্ত্রাসবাদীদের দেশ থেকে নির্মূল করার।

এদিকে এই সন্ত্রাসী হামলার পর কলকাতাসহ দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই ও চেন্নাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে যাত্রী তল্লাশি।