কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলার 'মূল হোতা' নিহত

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার ‘মূল হোতা’ কামরান গাজী নিহত হয়েছেন। সোমবার পুলওয়ামার পিঙ্গলান গ্রামে সেনা অভিযানে কামরান নিহত হন বলে ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে।

সেনাবাহিনীর দাবিতে বলা হয়, জইশ-এ-মোহাম্মদ নেতা মাসুদ আজহারের ঘনিষ্ঠ এই জঙ্গির সঙ্গে নিহত হয়েছেন আরও একজন। তৃতীয় জঙ্গির খোঁজে জোর তল্লাশি চলছে। জঙ্গিদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষে চারজন জওয়ানেরও মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন মেজর।

পুলওয়ামায় সিআরপিএফ গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় গত বৃহস্পতিবার ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। তার পর থেকে আততায়ীদের সন্ধানে দক্ষিণ কাশ্মীরে সেনাবাহিনী চিরুনি তল্লাশি শুরু করে। গোপন সূত্রে খবর আসে, আত্মঘাতী হামলাস্থল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পিঙ্গলান গ্রামে একটি বাড়িতে কয়েক জন জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছেন। রোববার মাঝরাতে সেখানে পৌঁছায় সেনাবাহিনী। শুরু হয় দুই পক্ষে সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষে দুই জঙ্গি ও চার জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ানদের পাশাপাশি তল্লাশি অভিযানে শামিল হয়েছিলেন দক্ষিণ কাশ্মীর পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অমিত কুমারও। তাঁর পায়ে গুলি লাগলে তিনি আহত হন। নিহত মেজরের নাম বিভূতি শঙ্কর ঢোনডিয়াল। অন্য জওয়ানেরা হলেন সিপাই হরি সিং ও অজয় কুমার এবং হাবিলদার শিউ রাম। নিহত কামরান গাজী পাকিস্তানি নাগরিক। আফগানিস্তান থেকে এসে তিনি উপত্যকায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন। যে কাশ্মীরি যুবক বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা চালান, সেই ১৯ বছরের আদিল আহমেদ দার, যাবতীয় নির্দেশ পেতেন কামরান গাজীর কাছ থেকে।

পুলওয়ামা-কাণ্ড ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ফের জটিল করে তুলেছে। ওই ঘটনার পর ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। কবে তিনি ইসলামাবাদে ফেরত যাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। সোমবার পাকিস্তানও দেশে ডেকে পাঠিয়েছে দিল্লিতে নিযুক্ত হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদকে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মহম্মদ ফয়সাল টুইট বার্তায় বলেন, আলোচনার জন্য হাইকমিশনারকে ডাকা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পুলওয়ামা-কাণ্ড বুঝিয়ে দিয়েছে আলোচনার রাস্তা বন্ধ। সন্ত্রাসবাদী ও তার মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্বশক্তিকে এখন একজোট হতে হবে। ভারত সফররত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও ম্যাকরির সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার পর মোদি এই মন্তব্য করেন। পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদী ও তার মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যারা ইতস্তত করছে, তারা আদতে সন্ত্রাসবাদকেই সমর্থন করছে।

পুলওয়ামা হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরিদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে।