অস্ট্রেলিয়ায় নাটকীয় টেন্ডারবাজিতে অর্থমন্ত্রীর নাম

ম্যাথিয়াস কোরম্যান। ছবি: এএফপি
ম্যাথিয়াস কোরম্যান। ছবি: এএফপি

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম ভ্রমণ প্রতিষ্ঠান হ্যালোওয়ার্ল্ডের দ্বারা বিমানের টিকিট কেনার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নথি প্রকাশিত হয় সোমবার। আর তাঁতেই তোলপাড় অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গন।

২০১৭ সালের ৭ জুলাইয়ে বিমানভাড়া বাবদ পরিশোধিত অর্থের সেই রসিদে রয়েছে দেশটির অর্থমন্ত্রী ম্যাথিয়াস কোরম্যানের নাম। আর তাতেই প্রায় দুই বছর পুরোনো দেশটির শত কোটি ডলারের টেন্ডারবাজির একটি ঘটনা নতুন করে আওড়াতে শুরু করেছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গন।

অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৭ অর্থবছরের শুরুতে দেশটির সরকারি ভ্রমণ খাতের প্রায় ১০০ কোটি অস্ট্রেলিয়া ডলারের একটি টেন্ডার পাস হয়। তবে নানাবিদ কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপছন্দের তালিকায় ছিল পূর্ববর্তী ২০১২ সালের টেন্ডার পাওয়া ভ্রমণ প্রতিষ্ঠান এওটি গ্রুপ। তা সত্ত্বেও তিন বছর মেয়াদি এই চুক্তিটি সে সময় দ্বিতীয়বারের মতো জিতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয় সে বছর। এমনকি সরকার ও রাজনৈতিক দলের রেষারেষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবীণ কর্মকর্তা জন শেরিডানকে পদ থেকে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তখন। কেননা, তিনিই টেন্ডার পাসের সব দাপ্তরিক প্রক্রিয়া পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

এদিকে অর্থমন্ত্রী ম্যাথিয়াস কোরম্যান গত বছরের জানুয়ারিতে পরিবারসহ সিঙ্গাপুরে অবকাশ যাপনে যান। আর সেই ভ্রমণে সিঙ্গাপুর যাওয়ার ২ হাজার ৭৮০ ডলার মূল্যের টিকিটটি কেনেন হ্যালোওয়ার্ল্ড। তবে সেটি যাত্রার অল্প কদিন আগে নয়। প্রায় ৫ মাস আগে ২০১৭ সালের ৭ জুলাইয়ে। আর খরচের নথিতে লেখা ছিল, ‘কর্মকর্তা ও পরিবার ভ্রমণ’। এওটি গ্রুপের ১০০ কোটি ডলারের টেন্ডারটি জেতার প্রায় এক সপ্তাহ আগে। আর এই এওটি গ্রুপ হ্যালোওয়ার্ল্ডেরই একটি শাখা প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, হ্যালোওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী বর্তমান সরকার দল লিবারেল পার্টির কোষাধ্যক্ষ অ্যান্ড্রু বার্নস। এ ছাড়া রাজ্য ও জাতীয় নির্বাচনে লক্ষাধিক ডলারও খরচ করেন তিনি। কোরম্যান এবং বার্নসের দীর্ঘদিনের বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক রয়েছে। আর সে বন্ধুত্ব থেকেই সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এওটি গ্রুপকে টেন্ডার পেতে সহায়তা করেছেন বলে মনে করেছেন অনেকে। আর বিনিময়ে কোরম্যানের প্রায় ৩৭ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার ব্যয়ের সিঙ্গাপুর ভ্রমণের খরচ বহন করেছে হ্যালোওয়ার্ল্ড। 

সোমবার এক বিবৃতিতে কোরম্যান জানিয়েছেন, ‘আমি সব খরচের জন্য আমার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছি। এ ব্যাপারে কোনো ধারণাই নাই যে সিঙ্গাপুর সফরকালে আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে কোনো অর্থ খরচ হয়নি। কেউ আমার ভ্রমণের খরচ বহন করেছে কি না, তা–ও আমি নিশ্চিত নই। তবে এটা নিশ্চিত, মন্ত্রী হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করি, কোনো ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগ করি না বা কাউকে করতেও দিই না।’ একই প্রসঙ্গে বার্নস বলেন, ‘আমরা ৬৫০ কোটি ডলারের ভ্রমণসেবা বিক্রি করি, অনেকেই ভ্রমণের জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে।’