দেশপ্রেমের নামে অশান্তি বরদাশত করব না: মমতা

সোমবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
সোমবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় অন্তত ৪০ জওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

বিজেপির সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) পাড়ায় পাড়ায় মিছিল করছে। তাদের স্লোগান ‘শান্তি নয়, বদলা চাই’।

এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করে বলেছেন, দেশপ্রেমের নামে রাজ্যে কোনো অশান্তি বরদাশত করা হবে না।

গত বৃহস্পতিবার ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জনের বেশি সদস্য নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, হামলার ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু করতে চাইছে বিজেপি। আগামী এপ্রিল মাস থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। হামলার ইস্যুতে নির্বাচনে সুবিধা নিতে চাইছে বিজেপি। তারা বোঝাতে চাইছে, তাদের দলই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। আর তাদের সঙ্গে আছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও আরএসএস। ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি, তাদের সমর্থক বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও আরএসএস-ভক্তরা।

ফেসবুকের কিছু পোস্টকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে রাজ্যজুড়ে অশান্তি শুরু হয়েছে। পোস্টদাতাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। পোস্টদাতা এক কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাজ্যজুড়ে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, বিরোধী কংগ্রেস ও বাম দল। তারা বিজেপিকে মোকাবিলায় মাঠে নেমেছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, দেশপ্রেমের নামে রাজ্যে কোনো অশান্তি বরদাশত করা হবে না। শক্ত হাতে দমন করা হবে।

মমতা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি শান্তিপ্রিয় রাজ্য। এখানের মানুষ দেশপ্রেমের আদর্শে গড়া। এখানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এক হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে পাথেয় করেছে। তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দূর অতীত থেকে এখানে বাস করে আসছেন। সেখানে আজ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস ও বিজেপি এক হয়ে জম্মু-কাশ্মীরের ঘটনাকে অস্ত্র করেছে। তারা দেশপ্রেমের ধুয়া তুলে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।

মমতা বলেন, ‘এই বাংলায় বিজেপি ও তার দোসরদের অশান্তি করতে দেওয়া হবে না। আমরা কারও কাছ থেকে দেশপ্রেম শিখব না। কারণ, আমরা দেশপ্রেমী। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস ও বিজেপি মিলে এখন এখানে অশান্তি ছড়াতে চাইছে। দাঙ্গা বাধাতে চাইছে। তাদের একটিই ধর্ম—সন্ত্রাস। মিথ্যে খবর প্রচার ও গুজব যারা ছড়াবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’

মমতা প্রশ্ন তোলেন, ভারতীয় গোয়েন্দারা হামলার ব্যাপারে আগাম সতর্ক করলেও কেন আড়াই হাজার জওয়ান নিয়ে সিআরপিএফের ৭৮টি গাড়ির বহর রওনা হলো? তবে কি ভোটের আগে যুদ্ধের কথা মনে পড়ল?

মমতা অভিযোগ করেন, এই ঘটনার পর মোদি পদত্যাগ না করে এখন রাজনৈতিক ভাষণ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। যারাই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাদেরই দেশবিরোধী তকমা লাগানো হচ্ছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতারাও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা শান্তি চান। বিজেপির দেশপ্রেমের জিগির তুলে অশান্তি হোক, সেটা চান না তাঁরা।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘দেশপ্রেমের ঠিকা তো কেউ নিয়ে রাখেনি। সংঘ পরিবার ভারতকে আরেকটা পাকিস্তান বানাতে চায়, যেখানে রাষ্ট্রে আর ধর্মনিরপেক্ষতা থাকবে না, গণতন্ত্র থাকবে না।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা ও কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান বলেছেন, নাগরিকদের কাউকে কাউকে দেশবিরোধী বলে চিহ্নিত করে সংঘ পরিবার একদিকে যেমন অশান্তি তৈরি করছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে ভারত সম্পর্কে ভুল বার্তা দিচ্ছে।

অন্যদিকে, নিজেদের দেশপ্রেমিক দাবি করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, অভূতপূর্ব দেশপ্রেমের জোয়ারে গোটা দেশ ভাসছে। আরএসএসের লোকেরাই জাতীয়তাবাদী। তারা হাতে জাতীয় পতাকা নেবে—এটা স্বাভাবিক। তারা যা করছে, ঠিক করছে।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ভারতের সাংগঠনিক সম্পাদক শচীন্দ্র নাথ সিংহ বলেছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের বহু যুবক জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করছে। সাধারণ মানুষও তাতে যোগ দিচ্ছে। যারা এর বিরোধিতা করছে, তারা তো দেশবিরোধী।