'সন্ত্রাসবাদই ভারত-সৌদির বড় দুশ্চিন্তা'

ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি
ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি

পুলওয়ামা প্রসঙ্গ উচ্চারণ করলেন না, সন্ত্রাস প্রসঙ্গে পাকিস্তানের নামও নিলেন না। কিন্তু সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জানালেন, সন্ত্রাসবাদই ভারত ও সৌদি আরবের বড় দুশ্চিন্তা। এই দুশ্চিন্তা দূর করতে ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৌদি আরব সহযোগিতা করবে। প্রয়োজনে তথ্যের আদান-প্রদানও করবে।

ভারত সফরে এসে আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ বিন সালমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের পৃথিবীকে নিরাপদ করতে এই সহযোগিতা জরুরি। যেসব দেশ সন্ত্রাসবাদকে হাতিয়ার করছে, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে।

ভারতে আসার আগে দুই দিনের সফরে সৌদি যুবরাজ পাকিস্তান গিয়েছিলেন। সেই সফরের ঠিক আগেই ঘটে যায় কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী সন্ত্রাসবাদী হামলা। মারা যান ৪৯ জন ভারতীয় আধা সামরিক নিরাপত্তারক্ষী। পাকিস্তানে ২০ বিলিয়ন ডলারের লগ্নির কথা ঘোষণা করে দেশে ফিরে সৌদি যুবরাজ গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভারতে আসেন। এই সফরে তিনি পুলওয়ামা-কাণ্ড ও সন্ত্রাস প্রসঙ্গে পাকিস্তানের নাম নেন কি না, সেই আগ্রহ দানা বেঁধেছিল। সৌদি যুবরাজ দুটি ক্ষেত্রেই নীরব থাকলেন।

তবে সৌদি অতিথিকে পাশে রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুলওয়ামা-কাণ্ডের অবতারণা করেন। বলেন, ‘পুলওয়ামায় নারকীয় সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ এই বিপদের আরও একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। এর মোকাবিলায় আমরা দুই দেশই একমত। সন্ত্রাসবাদের চরিত্র যেমনই হোক, তাকে কোনোভাবেই মদদ দেওয়া উচিত নয়। যারা সন্ত্রাসীদের সমর্থক, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা দরকার। সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো ধ্বংস করা ও তার সমর্থকদের শাস্তি দেওয়া অতি প্রয়োজনীয়, যাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হাতে অস্ত্র তুলে না নেয়।’ মোদি আরও বলেন, ‘আমি খুশি, এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সৌদি আরব একমত।’

সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু দেশ পাকিস্তান। তবু ভারতে এসে সৌদি যুবরাজ বলেন, আরব দেশসমূহের ‘ডিএনএ’-তেই আছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক। দ্বিপক্ষীয় এই সম্পর্ক কতটা গভীর ও আন্তরিক তা বোঝাতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রটোকল ভেঙে নরেন্দ্র মোদি দিল্লি বিমানবন্দরে যান মোহাম্মদ বিন সালমানকে স্বাগত জানাতে। ৩৩ বছর বয়সী অতিথিকে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরেন।

অবশ্য পাকিস্তানে বসবাসকারী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের নেতা মাসুদ আজহারকে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকাভুক্ত করার প্রচেষ্টায় সৌদি সমর্থন ভারত আদায় করতে পারেনি। বরং দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টির ‘রাজনীতিকরণ এড়ানোর’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

মাসুদ আজহারকে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার চেষ্টায় বারবার বাধা দিচ্ছে চীন। বিপক্ষে সৌদি আরবও। ভারত তবুও হাল ছাড়েনি। ফ্রান্স এই বিষয়ে জাতিসংঘে নতুন করে প্রস্তাব আনার কথা জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সেই উদ্যোগকে সমর্থন করছে।

এই সফরে ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে লগ্নি, পর্যটন, গৃহনির্মাণ ও তথ্য-সম্প্রচার ক্ষেত্রে পাঁচটি অনুচুক্তি ও বোঝাপড়া সই হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছে দুই দেশ। ভারত-সৌদি আরব দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ আগামী বছর ৩ হাজার কোটি ডলার ছুঁয়ে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বহরের নিরিখে সৌদি আরব চতুর্থ বৃহৎ দেশ।