মৌনতা ভেঙে মোদির সমালোচনায় কংগ্রেস

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রকারান্তরে রোম সম্রাট নিরোর সঙ্গে তুলনা করল ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস। অভিযোগ করল, কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪০ জন জওয়ানের যখন মৃত্যু ঘটছে, খবর পাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী তখন তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন। প্রধান বিরোধী দলের প্রশ্ন, এমন মানসিকতার দ্বিতীয় কোনো প্রধানমন্ত্রী কি পৃথিবীতে আছেন?

পুলওয়ামা ঘটনার পর কংগ্রেসসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা জানিয়েছিলেন, এই দুঃসময়ে প্রত্যেকেই সরকারে পাশে থাকবেন। সরকার যা পদক্ষেপ নেবে, বিরোধীরা তাকে সমর্থন করবে। রাজনৈতিক কারণে কাউকে দোষারোপের রাস্তায় হাঁটবে না। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে আজ বৃহস্পতিবার কংগ্রেস ফের আক্রমণাত্মক হলো। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সেদিন উত্তরাখন্ডের জিম করবেট পার্কে শুটিং করছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বেলা ৩টা বেজে ১০ মিনিটে সিআরপিএফ-এর কনভয়ের ওপর আত্মঘাতী আক্রমণ ঘটে। খবর পাওয়া সত্ত্বেও মোদি শুটিং চালিয়ে যান সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। গোটা দেশ যখন ক্রোধ ও শোকে হা-হুতাশ করছে, প্রধানমন্ত্রী তখন সেসব ভুলে চা-শিঙাড়া খেয়ে শুটিং করছিলেন! এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।

চরম উদাসীনতার জন্য রোম সম্রাট নিরো নিন্দিত। কারণ, রোম যখন জ্বলছিল, তিনি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। উদাসীনতার এই চরম উদাহরণের নাম না করেও প্রধানমন্ত্রীকে সুরজেওয়ালা প্রায় নিরোর সঙ্গেই তুলনা করলেন। তাঁর কথায়, ক্ষমতার লোভে মোদি রাজধর্ম পালনের কথা ভুলে বসেছেন। দেশ যখন নিহত জওয়ানদের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধারে ব্যস্ত, মোদি তখন আত্মপ্রচারে মগ্ন। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভারত সফরের যৌথ বিবৃতি নিয়েও কংগ্রেস সরব। মোদির সমালোচনা করে সুরজেওয়ালা বলেন, জাতিসংঘকে দিয়ে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ নেতা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণায় ভারত উদ্যোগী। সেই উদ্যোগ নষ্ট করতে সৌদি যুবরাজ সক্রিয়। বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করার কথা তিনি বলেছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী সেই প্রচেষ্টাকে নস্যাতের কোনো উদ্যোগ নিলেন না। এটাও বিস্ময়ের। সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, কাউকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার উদ্যোগ কি রাজনৈতিক? বন্ধুদেশ সৌদি আরবকে ওই মন্তব্য প্রত্যাহারে মোদি কি সাহসী হতে পারতেন না?

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মী–সমর্থকেরা এখনো কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবীদের মারধর করছেন, হয়রানি করছেন। রাজ্য ছেড়ে ফিরে যেতে চাপ দিচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। সামাজিক মাধ্যমগুলোয় বিরুদ্ধ প্রচার অব্যাহত রয়েছে। প্রতিশোধের জন্য ভারত কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়—তা নিয়ে চলছে জল্পনা। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জম্মু ও শ্রীনগর এবং দিল্লি ও শ্রীনগরের মধ্যে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা এবার থেকে উড়োজাহাজে যাতায়াত করতে পারবেন। নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। দেশের ৭ লাখ ৮০ হাজার জওয়ান এই সুবিধা পাবেন।