ভেনেজুয়েলায় অস্ত্র জমা দিয়ে দল ছাড়ছে সেনারা

দলত্যাগী সেনাদের কয়েকজন কথা বলছেন বিবিসির সঙ্গে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
দলত্যাগী সেনাদের কয়েকজন কথা বলছেন বিবিসির সঙ্গে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বিদেশি সাহায্য আনা নিয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে গেছেন বেশ কিছু সেনাসদস্য। এ সংখ্যা শতাধিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিক্ষোভের সমর্থনে ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে আসা কয়েকজন এখন তাঁদের পরিবার নিয়ে চিন্তিত। প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের অধীনে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই সেনাসদস্যরা। তবে সেনাবাহিনী ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।

আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, এখন কলাম্বিয়ায় অবস্থান করা ওই সেনাসদস্যদের কয়েকজনের একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসির সাংবাদিক ওরলা গুয়েরিন। এখন পর্যন্ত শতাধিক সেনাসদস্য দলত্যাগী হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁরা তাঁদের অস্ত্র মাটিতে রেখে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে এসেছেন।

২৩ বছর বয়সী এমন এক দলত্যাগী সেনাসদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের অনুগত সেনাবাহিনী হয়তো আমার পরিবারকে নির্যাতন করবে। আমি মনে করি, এখন পর্যন্ত যত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এর মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভালো।’

সরকারের বাধার মুখে সীমান্ত দিয়ে বিরোধী দলের বিদেশি সাহায্য আনা নিয়ে গত শনিবার ভেনেজুয়েলায় ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের রুখতে সেনাসদস্যরা রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়েন। সাহায্য আনা ঠেকাতে ভেনেজুয়েলার সীমান্তগুলো আংশিকভাবে বন্ধ করে দেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো। বিদেশি সাহায্য আনার পেছনে রয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের নেতা হুয়ান গুয়াইদো। গত মাসে তিনি নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন এবং খাদ্য, ওষুধসহ বিদেশি সাহায্য দেশে আনবেন বলে হুমকি দেন। স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় এই বিদেশি সাহায্য গতকাল রোববার দেশটিতে আনার চেষ্টা করা হয়।

ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। খাবার ও ওষুধের মতো মৌলিক পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানকার জনগণ। অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। ২০১৫ সাল থেকে কমপক্ষে ২৭ লাখ মানুষ ভেনেজুয়েলা ছেড়ে পালিয়েছেন।

গুয়াইদো জোর দিয়ে বলছেন, লোকজনের সাহায্য প্রয়োজন। অন্যদিকে, মাদুরো বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে সাহায্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

শনিবার ব্রাজিলের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষে সেনাদের গুলিতে কমপক্ষে দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলত্যাগী সেনাসদস্যদের কয়েকজন সাক্ষাৎকার দিতে সম্মত হন। তাঁরা বলেন, আরও অনেক সেনাসদস্য তাঁদের মতো দল ছাড়তে চান। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দেখতে দেখতে পেশাদার সদস্যরা ক্লান্ত। তাঁরা দাস হিসেবে থাকতে চান না, স্বাধীন হতে চান।

সরকারি বাধার মুখে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সাহায্য আনা নিয়ে শনিবার ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় ভেনেজুয়েলায়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সরকারি বাধার মুখে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সাহায্য আনা নিয়ে শনিবার ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় ভেনেজুয়েলায়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দলত্যাগী এক নারী সেনাসদস্য বলেন, পরিস্থিতি ‘উত্তেজনাকর’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভাবছি যে নিজের দেশের মানুষের কোনো ক্ষতি আমি করতে পারব না।’

আরেক দলত্যাগী সেনাসদস্য বলেন, রাস্তায় ভেনেজুয়েলার লোকজনের এভাবে সাহায্য নিয়ে লড়াই করার ঘটনায় তিনি মর্মাহত। তিনি আরও বলেন, ‘নিজেকে অক্ষম মনে হচ্ছিল। আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও প্রেসিডেন্ট মাদুরোর প্রতি হুমকি দিয়ে বলেছেন, মাদুরোর ‘সময় ঘনিয়ে এসেছে’। সিএনএনকে তিনি বলেন, তাঁর (মাদুরো) সময় আর কত দিন আছে, সুনির্দিষ্ট করে তা বলা কঠিন। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী, ভেনেজুয়েলার জনগণ নিশ্চিত করবে যে মাদুরোর সময় ফুরিয়ে এসেছে।’